পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
ঔপনিষদ ব্রহ্ম

কি ঊর্দ্ধদেশ, কি তির্য্যক্, কি মধ্যদেশ কেহ ইহাকে গ্রহণ করিতে পারে না—তাঁহার প্রতিমা নাই, তাঁহার নাম মহদ্‌যশ!

 প্রাচীন ভারতে সংসারবাসী জীবাত্মার লক্ষ্যস্থান এই পরমাত্মাকে বিদ্ধ করিবার মন্ত্র ছিল—ওঁ।

প্রণবোধহঃ শরোহ্যাত্মা ব্রহ্মতল্লক্ষ্যমুচ্যতে।

তাঁহার প্রতিমা ছিল না, কোন মূর্ত্তিকল্পনা ছিল না—পূর্ব্বতন পিতামহগণ তাঁহাকে মনন করিবার জন্য সমস্ত পরিত্যাগ করিয়া একটিমাত্র শব্দ আশ্রয় করিয়াছিলেন। সে শব্দ যেমন সংক্ষিপ্ত, তেমনি পরিপূর্ণ, কোন বিশেষ অর্থ দ্বারা সীমাবদ্ধ নহে। সেই শব্দ চিত্তকে ব্যাপ্ত করিয়া দেয়, কোন বিশেষ আকার দ্বারা বাধা দেয় না; সেই একটি মাত্র ওঁ শব্দের মহাসঙ্গীত জগৎসংসারের ব্রহ্মরন্ধ্র হইতে যেন ধ্বনিত হইয়া উঠিতে থাকে।


 ব্রহ্মের বিশুদ্ধ আদর্শ রক্ষা করিবার জন্য পিতামহগণ কিরূপ যত্নবান ছিলেন ইহা হইতেই তাহার প্রমাণ হইবে।

 চিন্তার যতপ্রকার চিহ্ন আছে তন্মধ্যে ভাষাই সর্ব্বাপেক্ষা চিন্তার অনুগামী। কিন্তু ভাষারও সীমা আছে, বিশেষ অর্থের দ্বারা সে আকারবদ্ধ—সুতরাং ভাষা আশ্রয় করিলে চিন্তাকে ভাষাগত অর্থের চারি প্রান্তের মধ্যে রুদ্ধ থাকিতে হয়।

 ওঁ একটি ধ্বনিমাত্র— তাহার কোন বিশেষ নির্দ্দিষ্ট অর্থ নাই। সেই ওঁ শব্দে ব্রহ্মের ধারণাকে কোন অংশেই সীমাবদ্ধ করে না—সাধনা দ্বারা আমরা ব্রহ্মকে যতদূর জানিয়াছি