বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯৪
কথা-চতুষ্টয়।

করিত না, এবং আইন বিদ্যা সম্বন্ধে নায়েবের নিকট আপন অজ্ঞতা স্বীকার করিতে কুণ্ঠিত হইত না। নায়েব সেটাকে নিতান্তই ছল মনে করিত। এমন ভাবে বছর দুয়েক কাটিল।

 সম্প্রতি একটি অবাধ্য প্রজাকে শাসন করা আবশ্যক হইয়াছে। নায়েব মহাশয় তাহার নামে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন অপরাধ ও দাবীতে নালিষ রুজু করিয়া দিবার অভিপ্রায় প্রকাশ করিয়া পরামর্শের জন্য শশিভূষণকে কিছু বিশেষ পীড়াপীড়ি করিয়া ধরিলেন। শশিভূষণ পরামর্শ দেওয়া দূরে থাক্‌ শান্ত অথচ দৃঢ়ভাবে হরকুমারকে এমন গুটি দুই চারি কথা বলিলেন, যাহা তাহার কিছুমাত্র মিষ্ট বোধ হইল না।

 এদিকে আবার প্রজার নামে একটি মকদ্দমাতেও হরকুমার জিতিতে পারিলেন না। তাঁহার মনে দৃঢ় ধারণা হইল শশিভূষণ উক্ত হতভাগ্য প্রজার সহায় ছিল। তিনি প্রতিজ্ঞা করিলেন এমন লোককে গ্রাম হইতে অবিলম্বে তাড়াইতে হইবে।

 শশিভূষণ দেখিলেন তাঁহার ক্ষেতের মধ্যে গোরু প্রবেশ করে, তাঁহার কলাইয়ের খোলায় আগুন লাগিয়া যায়, তাঁহার সীমানা লইয়া বিবাদ বাধে, তাঁহার প্রজারা সহজে খাজনা দেয় না এবং উল্টিয়া তাঁহার নামে মিথ্যা মকদ্দমা আনিবার উপক্রম করে, এমন কি, সন্ধ্যার সময় পথে বাহির হইলে তাঁহাকে মারিবে এবং রাত্রে তাহার বসত বাটীতে আগুন লাগাইয়া দিবে এমন সকল জনশ্রুতিও শোনা যাইতে লাগিল।