পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আত্মমন্দিরে
১০১

 পে। “আমি ইহার ত কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। এ সবে তোমার সুখ হয় না কেন?”

 লু। “কেন হয় না তা এত দিনে বুঝিয়াছি। তিন বৎসর রাজপ্রাসাদের ছায়ায় বসিয়া যে সুখ না হইয়াছে, উড়িষ্যা হইতে প্রত্যাগমনের পথে এক রাত্রে সে সুখ হইয়াছে। ইহাতেই বুঝিয়াছি।”

 পে। “কি বুঝিয়াছ?”

 লু। “আমি এতকাল হিন্দুদিগের দেবমূর্ত্তির মত ছিলাম। বাহিরে সুবর্ণ রত্নাদিতে খচিত; ভিতরে পাষাণ। ইন্দ্রিয় সুখান্বেষণে আগুনের মধ্যে বেড়াইয়াছি, কখন আগুন স্পর্শ করি নাই। এখন একবার দেখি যদি পাষাণ মধ্যে খুজিয়া একটা রক্তশিরা ধমনী বিশিষ্ট অন্তঃকরণ পাই?”

 পে। “এওত কিছু বুঝিতে পারিলাম না।”

 লু। “এ হীরার অঙ্গুরী তোমায় কে দিয়াছে?”

 পে। “শাহবাজ খাঁ।”

 লু। “আর সেই পান্নার কণ্ঠী?

 পে। “আজিম খাঁ।”

 লু। “আর কে কে তোমার অলঙ্কার দিয়াছে?”

 পে। (হাসিয়া) “করীম খাঁ, কোকলতাষ, রাজা জীবন সিংহ, রাজা প্রতাপাদিত্য, মুসা খাঁ—কত লোক দিয়াছে কাহার নাম করিব। এখন যা পরিয়া আগ্রার পরিচারিকা মণ্ডলে প্রাধান্য স্বীকার করাই, সে স্বয়ং জাহাঙ্গীরের দান।”