পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাগরসঙ্গমে।

যাত্রীরা ভয়ে কণ্ঠাগতপ্রাণ। বায়ুমাত্র নাই, সুতরাং তাঁহারা তরঙ্গান্দোলনকম্প কিছুই জানিতে পারিলেন না। তথাপি সকলেই মৃত্যু নিকট নিশ্চিত করিলেন। পুৰুষেরা নিঃশব্দে দুর্গানাম জপ করিতে লাগিলেন, স্ত্রীলোকেরা সুর তুলিয়া বিবিধ শব্দ বিন্যাসে কাঁদিতে লাগিলেন। একটী স্ত্রীলোক গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জ্জন করিয়া আসিয়াছিল—সেই কেবল কাঁদিল না।

 প্রতীক্ষা করিতে করিতে অনুভবে বেলা প্রায় এক প্রহর হইল। এমত সময়ে অকস্মাৎ নাবিকেরা দরিয়ার পাঁচ পীরের নাম কীর্ত্তন করিয়া মহাকোলাহল করিয়া উঠিল। যাত্রীরা সকলেই জিজ্ঞাসা করিয়া উঠিল “কি! কি! মাঝি কি হইয়াছে?” মাঝিরাও একবাক্যে কোলাহল করিয়া কহিতে লাগিল, “রোদ উঠেছে! রোদ উঠেছে! ডাঙ্গা! ভাঙ্গা! ডাঙ্গা!” যাত্রীরা সকলেই ঔৎসুক্য সহকারে নৌকার বাহির আসিয়া কোথায় আসিয়াছেন কি বৃত্তান্ত দেখিতে লাগিলেন। দেখিলেন, সূর্য্য প্রকাশ হইয়াছে। কুজ্ঝটিকার অন্ধকার রাশি হইতে দিঙ্‌মণ্ডল একেবারে বিমুক্ত হইয়াছে। বেলা প্রায় প্রহরাতীত হইয়াছে। যে স্থানে নৌকা আসিয়াছে, সে প্রকৃত মহাসমুদ্র নহে, নদীর মোহানা মাত্র, কিন্তু তথায় নদীর যেরূপ বিস্তার সেরূপ বিস্তার আর কোথাও নাই। নদীর এক কূল নৌকার অতি নিকটবর্ত্তী বটে—এমন কি পঞ্চাশৎ হস্তের মধ্যাগত; কিন্তু অপর কূলের চিহ্ন দেখা যায় না। যে দিকেই দেখা যায়, অনন্ত জলরাশি চঞ্চলরবিরশ্মিমালা-