পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
কপালকুণ্ডলা।

নৌকার গতি সংযত করা যাইতে পারে, তখন যাত্রীরা রসুলপুরের মোহানা অতিক্রম করিয়া অনেক দূর আসিয়াছিলেন। এখন, নবকুমারের জন্য প্রত্যাবর্ত্তন করা যাইবে কি না, এবিষয়ের মীমাংসা আবশ্যক হইল। এই স্থানে বলা আবশ্যক যে নবকুমারের সহযাত্রীরা তাঁহার প্রতিবেশী মাত্র, কেহই আত্মবন্ধু নহে। তাঁহারা বিবেচনা করিয়া দেখিলেন, যে তথা হইতে প্রতিবর্ত্তন করা আর এক ভাঁটার কর্ম্ম। পরে রাত্রি আগত হইবে, আর রাত্রে নৌকা চালনা হইতে পারিবে না, অতএব পরদিনের জোয়ারের প্রতীক্ষা করিতে হইবেক। একাল পর্য্যন্ত সকলকে অনাহারে থাকিতে হইবেক। দুই দিন নিরাহারে সকলের প্রাণ ওষ্ঠাগত হইবেক। বিশেষ নাবিকেরা প্রতিগমন করিতে অসম্মত; তাহারা কথার বাধ্য নহে। তাহারা বলিতেছে যে নবকুমারকে ব্যাঘ্রে হত্যা করিয়াছে। তাহাই সম্ভব। তবে এত ক্লেশ স্বীকার কিজন্য?

 এইরূপ বিবেচনা করিয়া যাত্রীরা নবকুমার ব্যতীত স্বদেশ গমনই উচিত বিবেচনা করিলেন। নবকুমার সেই ভীষণ সমুদ্রতীরে বনবাসে বিসর্জ্জিত হইলেন।

 পাঠক! তুমি শুনিয়া প্রতিজ্ঞা করিতেছ তুমি কখন পরের উপবাস নিবারণার্থ কাষ্ঠাহরণে যাইবে না? যদি এমত মনে কর, তবে তুমি পামর—এই যাত্রীদিগের ন্যায় পামর। আত্মোপকারীকে বনবাসে বিসর্জ্জন করা যাহাদিগের প্রকৃতি, তাহারা চিরকাল আত্মোপকারীকে বন-