পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজপথে।
৫১

 আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইলেও সচরাচর এমত অন্ধকার হয় না যে অনারত স্থানে স্থূল বস্তুর অবয়ব লক্ষ্য হয় না। সম্মুখে একটা বৃহৎ বস্তু পড়িয়াছিল; নবকুমার অনুভব করিয়া দেখিলেন যে সে ভগ্ন শিবিকা; অমনি তাঁহার হৃদয়ে কপালকুণ্ডলার বিপদ্ আশঙ্কা হইল। শিবিকার দিকে যাইতে আবার ভিন্ন প্রকার পদার্থে তাঁহার পদস্পর্শ হইল। এ স্পর্শ কোমল মনুষ্যশরীরস্পর্শের ন্যায় বোধ হইল। বসিয়া হস্ত মর্দ্দন করিয়া দেখিলেন, মনুষ্যশরীর বটে। স্পর্শ অত্যন্ত শীতল; তৎসঙ্গে দ্রব পদার্থের স্পর্শ অনুভূত হইল। নাড়ীতে হাত দিয়া দেখিলেন, স্পন্দ নাই, প্রাণবিয়োগ হইয়াছে। বিশেষ মনঃসংযোগ করিয়া দেখিলেন, যেন নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনা যাইতেছে। নিঃশ্বাস আছে তবে নাড়ী নাই কেন? এ কি রোগী? নাসিকার নিকট হাত দিয়া দেখিলেন, নিশ্বাস বহিতেছে না। তবে শব্দ কেন? হয়ত কোন জীবিত ব্যক্তিও এখানে আছে। এই ভাবিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন “এখানে কেহ জীবিত ব্যক্তি আছে?”

 মৃদুস্বরে এক উত্তর হইল “আছি।”

 নবকুমার কহিলেন, “কে তুমি?”

 উত্তর হইল “তুমি কে?” নবকুমারের কর্ণে স্বর স্ত্রীকণ্ঠজাত বোধ হইল। ব্যগ্র হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন “কপালকুণ্ডলা না কি?”

 স্ত্রীলোক কহিল, “কপালকুণ্ডলা কে তা জানি না—আমি পথিক, আপাততঃ দস্যূহস্তে নিষ্কুণ্ডলা হইয়াছি।”