পাতা:করিম সেখ - জলধর সেন.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিম সেখ ছাড়িয়া দিলাম। একটু পরেই আবার নৌকা লাগাইতে হইল ; বসিরের আবার দাস্ত হইল। এবার সে কাতর হইয়া পড়িল, আমারও মনে ভয় হইল। নৌকা লাগাইয়াই থাকিলাম । তাহার পর দুই তিনবার দান্ত হইলে সে অজ্ঞান হইয়া পড়িল । আমি আর কি করিব ? চারিদিকে জঙ্গল, নদীর মধ্যেও অন্য নৌকা দেখিতে পাইলাম না। বসিয়া বসিয়া আল্লাকে ডাকিতে লাগিলাম। সন্ধ্যাকালে বসির ভাই মারা গেল। তখন আর কি করি, সমস্ত রাত্রি তাহাকে লইয়া নৌকাতেই রহিলাম। রাত্ৰিতে বাঘের ভয়ে উপরে উঠতে পারিলাম না। প্ৰাতঃকালে ডাঙ্গায় উঠিয়া একটা ছোট কবর কাটিলাম এবং অতি কষ্টে বসির ভাইকে মাটী:দিলাম। তাহার পর আর ধান কাটিতে যাইতে ইচ্ছা হইল না। বাড়ী আসিবার জন্য নৌকা ছাড়িলাম। এ তিন দিন আমি কিছু খাই নাই ; দিন রাত নৌকা চালাইয়া বাড়ী আসিয়াছি। আগে যদি জানিতাম যে এমন হইবে, তাহা হইলে কি আর ধান কাটিতে যাই । হা আল্লা, কি করিলে।” করিম আবার কাঁদিতে লাগিল। তখন বসিরের মা বলিল, “করিম, এখন আমাদের উপায় ?” করিম নয়ন মার্জনা করিয়া বলিল, “সে জন্য ভাবি না, আমি যতদিন বঁচিয়া আছি, ততদিন তোমাদের কোন কষ্ট হবে না। আমিও ত তোমারই ছেলে। বসির গিয়াছে, আমি আছি। তোমাদের কোন ভয় নাই, আমি যেমন করিয়া হোক তোমাদের সংসার চালাইব। তাহার জন্য ভাবিও না।” ** করিমের কথা শুনিয়া বৃদ্ধ যেন অকুল সাগরে কুল পাইল। সে করিমকে প্ৰাণ খুলিয়া আশীৰ্বাদ করিত্নে লাগিল।