পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৮
কলিকাতার ইতিহাস

কর্ত্তৃক এই সংসারে প্রেরিত হইয়াছে। সেই সুমহান্ উদ্দেশ্য তাহাদের যাবতীয় জাতীয় মনোভাব ও কার্য্যের মধ্য দিয়া প্রবাহিত হয় এবং বিশেষ বিশেষ গুরুতর ব্যাপার উপলক্ষে জাতীয় জীবনে প্রকাশ পায়। হিন্দুর পক্ষে ধর্ম্মই ভগবানের সেই মহদুদ্দেশ্য। এই ধর্ম্ম কথাটার ইংরেজী প্রতিশব্দ নাই, কারণ ‘ধর্ম্ম’ বলিলে হিন্দু যাহা বুঝে, ইংরেজী কোন শব্দদ্বারাই তাহা প্রকাশ করা যায় না। হিন্দুর ধর্ম্ম শব্দে যে ভাব বুঝায়, তাহা মানুষের চিন্তায়, বাক্যে ও কার্য্যে প্রকাশ পায়, এবং যতকাল আত্মার মুক্তি না ঘটে, ততকাল জন্মজন্মান্তর ব্যাপিয়া তাহা প্রকৃতির কার্যকরী শক্তিরুপে তাহার ক্রিয়াসমূহকে নিয়মিত করে। হিন্দুজাতির বিশেষ গৌরবের বিষয় এই যে, মানুষের মুক্তিলাভের নিমিত্ত ভগবান যে শক্তি প্রদান করিয়াছেন, তদনুসারে তাহারা আপনাদের নির্দিষ্ট কর্ম্ম সম্পন্ন করিয়াছে। মানুষ যে আত্মোন্নতিসাধনে ভগবান্‌কে আত্মার ভিতর উপলব্ধি করিতে পারে, ইহা তাহারা আপনাদের জীবনে প্রতিপন্ন করিয়াছে, এবং যে পথে চলিলে ভগবানের নিকট উপস্থিত হওয়া যায়, সে পথ তাহারা উন্মুক্ত করিয়াছে; তাহাদের চরম লক্ষ্য সাধন কল্পে চেষ্টা করিতে করিতে হিন্দুজাতি এমন একটি দার্শনিক তত্ব ও ধর্ম্মের আবিষ্কার করিয়াছে যে, তাহা জগতে অদ্বিতীয়। বাহ্যেন্দ্রিয়সমুহ দ্বারা পর্য্যবেক্ষণ করিয়াই তাহারা সন্তুষ্ট হয় নাই, প্রত্যুত তাহারা আপনাদের মনোবৃত্তিনিচয় যথাসম্ভব বিকশিত করিয়াছে, এবং সাধারণতঃ 'যোগ' নামে খ্যাত বিশেষ প্রণালী দ্বারা সুস্পষ্ট অন্তর্দর্শনশক্তি মা করিয়াছে! এই যোগবলে তাহারা কাল ও স্থানের দূরত্ব বিলুপ্ত করিতে সমর্থ হইয়াছে,—ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্ত্তমান তাহাদের নিকট মধ্যাহ্নকালীন সূর্য্যের ন্যায় প্রতিভাত হইয়াছে।