পাতা:কাঙাল হরিনাথ - জলধর সেন.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঙ্গাল হরিনাথ ܬܬ পিপাসা তাঁহার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে ফন্তু প্রবাহের ন্যায় নিয়ত প্রবাহিত হইত, সেই গভীর অনুরাগ অবশেষে এক অনাদি অনন্ত বিশ্বজননীর প্ৰেমে বিলীন হইয়া যায়। তাই দুঃখ, কষ্ট, শোকতাপে তাপিত নরনারী তাঁহার সঙ্গীত শ্রবণে ক্ষণকালের জন্য সমস্ত জ্বালাযন্ত্রণা ভুলিয়া, মনে করেমাতৃস্নেহের মত সে যেন কি একটা সুশীতল দ্রব্যের সান্নিধ্য লাভ করিয়াছে। বঙ্গসাহিত্যকে সমুজ্জ্বল করিবার জন্য তাঁহার পবিত্র লেখনীপ্রসূত বহু পুস্তকাদি বিদ্যমান থাকিলেও, একমাত্র সঙ্গীতেই কাঙ্গাল ফিকির অমরত্ব লাভ করিয়াছেন। অসংখ্য নরনারী এখনও কৃতজ্ঞ হৃদয়ে যে তাহার নাম করে, তাহার সঙ্গীতই তাহার কারণ। একদিকে তিনি যেমন নিরাশ্রয় প্ৰপীড়িত দীনদরিদ্রের জন্য প্ৰাণপণে অত্যাচারের বিরুদ্ধে মহাসংগ্ৰাম করিতেন, অপর দিকে তাহার কণ্ঠনিঃসৃত স্বরচিত পবিত্ৰগীতিস্রোতে দুঃখ-দৈন্য-শোক-তাপ সমস্তই ভাসিয়া যাইত। সহস্ৰ সহস্ৰ শ্রোতা পুত্তলিকার মত স্থিরভাবে অতৃপ্ত-হৃদয়ে। তাহার কণ্ঠনিঃসৃত সঙ্গীতসুধা পান করিত এবং নীরবে অশ্রু বিসর্জন কিরিত । বাৰ্দ্ধক্যে হরিনাথ অধিকাংশ সময়ই ধৰ্ম্মচিন্তায় নিযুক্ত থাকিতেন। সংসার চিন্তা, অন্নকষ্ট কিছুই তাঁহার হৃদয় স্পর্শ করিতে পারিত না। পরের উপকার করা তাহার জীবনের কাৰ্য্য ছিল, অন্তিম মুহূৰ্ত্তেও সেই পরম পবিত্র ব্রত পালনে তিনি উদাসীন হন নাই। দুঃখী, তাপী, অনাথ, অসহায় রোগী সকলেই তাহার স্নেহ পাইত। তিনি মাতৃহীনের মাতা, বিপক্সের বন্ধু, সম্পন্ন ব্যক্তির সুপরামর্শদাতা এবং কুপ্ৰ’গামী জনগণের সুপথপ্ৰদৰ্শক ছিলেন। দাসের ন্যায় তিনি অনাথের সেবা করিতেন। বিপন্ন ব্যক্তি তাহার উপর নির্ভর করিয়া নিরূদ্বেগ হইত। তিনি রোগী ও তাপীর সান্তুনার স্থল ছিলেন। হরিনাথ যখন ধীরে ধীরে রোগীর