পাতা:কাঙ্গাল হরিনাথ (দ্বিতীয় খণ্ড) - জলধর সেন.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ও শিক্ষাগুরু। যিনি বেদের উপদেশ প্ৰদান করেন, কিংবা যিনি সৎশিক্ষা অর্থাৎ যাহাতে আত্মার উন্নতি হয়, এইরূপ শিক্ষা দান করেন, তিনিই আচাৰ্য্য। যাহাতে আত্মোন্নতি হয়, এ কথা বেদবেত্তা ব্যতীত কেহ জানে না । বেদ অধ্যয়ন করিলেই যে, বেদ কি তাহা জানা যায় অর্থাৎ বেদান্ত হওয়া যায়, তাহা নহে। বেদাধ্যয়ন আর বেদবেত্ত স্বতন্ত্র কথা । যিনি বেদের তত্ত্ব জানেন, তিনি বেদবেত্তা। চতুৰ্ব্বেদের একই তত্ত্ব নির্বিশেষে ব্ৰহ্ম এবং তঁহার স্বরূপ। স্বরূপকেই সবিশেষ ব্ৰহ্ম বলে। যিনি নিৰ্বিশেষ ও সবিশেষ ব্ৰহ্মতত্ত্ব জানেন, তিনিই বেদবেত্তা। জানেন, এই ক্রিয়ার তাৎপৰ্য্য এই যে, হৃদয় নির্বিশেষে ব্ৰহ্মতত্ত্ব অনুভব এবং সবিশেষ ব্ৰহ্ম প্ৰত্যক্ষ করেন। অনুভব জ্ঞানের কাৰ্য্য, প্ৰত্যক্ষ ভক্তির কাৰ্য্য। অতএব বেদ অধ্যয়নে যাহার ব্ৰহ্মজ্ঞান এবং ভক্তির প্রকাশ হইয়াছে, তিনিই আচাৰ্য্য। অনেকে বেদ অধ্যয়ন করেন এবং বুৎপন্নও হইয়া থাকেন, কিন্তু জ্ঞান ও ভক্তি লাভ করিতে পারেন না । যোগসাধন করিতে করিতে যাহার কুণ্ডলিনী শক্তির প্রকাশ হয় নাই, তিনি বেদাধ্যাপক বলিয়া পরিচিত হউন বা না হউন, বেদাধ্যয়ন করুন, বা না করুন, জ্ঞান ও ভক্তির প্রসাদে বেদের তত্ত্ব জানেন। অতএব যাহার কুণ্ডলিনী শক্তির প্রকাশ হয় নাই, তিনি বেদাধ্যয়ন করিতে জানেন, বেদ কি তাহ জানেন না। যিনি বেদ জানেন, তিনিই আচাৰ্য্য। এই আচাৰ্য্যের সেবা দুই প্ৰকার ; সেবা ও শুশ্ৰষ । আচাৰ্য্যের আদেশ শ্রবণ ও পালন, ইহাকেই শুশ্রুষা বলে, এবং আচাৰ্য্যের পূজাদির নাম সেবা। আচাৰ্য্য তোমার মত অবয়বযুক্ত মানব হউন ; যখন তঁহাতে ব্ৰহ্মশক্তি কুণ্ডলিনীর প্রকাশ হইয়াছে, তখন তিনিও শক্তিমান, ইহাতে আর সন্দেহমাত্ৰ নাই। কারণ ব্ৰহ্মেতেও যে শক্তি বিরাজ করিতেছে, তাঁহাতেও সেই শক্তির প্রকাশ হইয়াছে। অতএব, আচাৰ্য্য অর্থাৎ গুরুদেবকে গুরুব্রহ্ম বলিলে আর কি দোষ হইতে পারে ?