অতিশয় আহ্লাদ জন্মিল। অনন্তর মধুপানমত্ত মধুকর ও কেলিপর কলহংসের কোলাহলে আহূত হইয়া সরোবরের সমীপবর্ত্তী হইলেন। চতুর্দ্দিকে শ্রেণীবদ্ধ তরুমধ্যে ত্রৈলোক্যলক্ষ্মীর দর্পণস্বরূপ বসুন্ধরাদেবীর স্ফটিকগৃহস্বরূপ, অচ্ছোদননামক সরোবর নেত্রগোচর করিলেন। সরোবরের জল অতি নির্ম্মল। জলে কমল, কুমুদ, কহ্লার প্রভৃতি নানাবিধ কুসুম বিকসিত হইয়াছে। মধুকর গুন্ গুন্ ধ্বনি করিয়া এক পুষ্প হইতে অন্য পুষ্পে বসিয়া মধুপান করিতেছে। কলহংস সকল কলরব করিয়া কেলি করিতেছে। কুসুমের সুরভিরেণু হরণ করিয়া শীতল সমীরণ নানা দিকে সুগন্ধ বিস্তার করিতেছে। সরোবরের শোভা দেখিয়া মনে মনে চিন্তা করিলেন, কিন্নরমিথুনের অনুসরণ নিষ্ফল হইলেও এই মনোহর সরোবর দেখিয়া আমার নেত্রযুগল সফল ও চিত্ত সফল হইল। এতাদৃশ রমণীয় বস্তু কখন দেখিও নাই, দেখিবও না; বোধ হয়, ভগবান্ ভবানীপতি এই সরোবরের শোভায় মোহিত হইয়া কৈলাসনিবাস পরিত্যাগ করিতে পারেন না। অনন্তর সরোবরের দক্ষিণ তীরে উপস্থিত হইয়া অশ্ব হইতে অবতীর্ণ হইলেন। পৃষ্ঠ হইতে পর্য্যাণ উপনীত হইলে ইন্দ্রায়ুধ এক বার ক্ষিতিতলে বিলুণ্ঠিত হইল। পরে ইচ্ছাক্রমে স্নান ও জলপান করিয়া তীরে উঠিলে রাজকুমার উহার পশ্চাদ্ভাগের পদদ্বয় পাশ দ্বারা আবদ্ধ করিয়া দিলেন। সে তীরপ্ররূঢ় নবীন দূর্ব্বা ভক্ষণ করিতে লাগিল। রাজকুমারও সরোবরে অবগাহন পূর্ব্বক মৃণাল ভক্ষণ ও জল পান করিয়া তীরে উঠিলেন। এক লতামণ্ডপমধ্যবর্ত্তী শিলাতলে নলিনীপত্রের শয্যা ও উত্তরীয় বস্ত্রের উপাধান প্রস্তুত করিয়া শয়ন করিলেন।
ক্ষণ কাল বিশ্রামের পর সরসীর উত্তর তীরে বীণাতন্ত্রীঝঙ্কারমিশ্রিত সঙ্গীত শুনিলেন। ইন্দ্রায়ুধ শব্দ শুনিবামাত্র কবল পরিত্যাগ পূর্ব্বক সেই দিকে কর্ণপাত করিল। এই জনশূন্য অরণ্যে কোথায় সঙ্গীত হইতেছে জানিবার নিমিত্ত রাজকুমার যে