আমি যে আছি সেই থাকার মূল্যই হচ্ছে অহংকার। এই মূল্য যতক্ষণ। নিজের মধ্যে পাচ্ছি ততক্ষণ নিজেকে টিকিয়ে রাখবার সমস্ত দায়, সমস্ত দুঃখ অনবরত বহন করে চলেছি। সেইজন্য বৌদ্ধরা বলেছে, এই অহংকারটাকে বিসর্জন করলেই টিকে থাকার মূল মেরে দেওয়া হয়, কেননা তখন আর টিকে থাকার মজুরি পােষায় না।
যাই হােক, এই মূল্য তাে কোনাে-একটা ভাণ্ডার থেকে জোগানাে হয়েছে। অর্থাৎ আমি থাকি এরই গরজ কোনাে-এক জায়গায় আছে; সেই গরজ অনুসারেই আমাকে মূল্য দেওয়া হয়েছে। আমি থাকি এই ইচ্ছার আনুচর্য সমস্ত বিশ্ব করছে, বিশ্বের সমস্ত অণুপরমাণু। সেই পরম-ইচ্ছার গৌরবই আমার অহংকারে বিকশিত। সেই ইচ্ছার গৌরবেই এই অতিক্ষুদ্র আমি বিশ্বের কিছুর চেয়েই পরিমাণ ও মূল্যে কম নই।
এই ইচ্ছাকে মানুষ দুইরকম ভাবে দেখেছে। কেউ বলেছে এ হচ্ছে শক্তিময়ের খেয়াল, কেউ বলেছে এ হচ্ছে আনন্দময়ের আনন্দ। আর যারা বলেছে এ হচ্ছে মায়া, অর্থাৎ যা নেই তারই থাকা, তাদের কথা ছেড়ে দিলুম।
আমার থাকাটা শক্তির প্রকাশ না প্রীতির প্রকাশ, এইটে যে যেমন মনে করে সে সেইভাবে জীবনের লক্ষ্যকে স্থির করে। শক্তিতে আমাদের যে মূল্য দেয় তার এক চেহারা, আর প্রীতিতে আমাদের যে মূল্য দেয় তার চেহারা সম্পূর্ণ আলাদা। শক্তির জগতে আমার অহংকারের যে দিকে গতি প্রীতির জগতে আমার অহংকারের গতি ঠিক তার উল্টো দিকে।
শক্তিকে মাপা যায়; তার সংখ্যা, তার ওজন, তার বেগ সমস্তেরই আয়তন গণিতের অঙ্কের মধ্যে ধরা পড়ে। তাই যারা শক্তিকেই চরম ব’লে জানে তারা আয়তনে বড়াে হতে চায়। টাকার সংখ্যা, ললাকের সংখ্যা, উপকরণের সংখ্যা, সমস্তকেই তারা কেবল বহুগুণিত করতে থাকে।
৯