পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৯
শিক্ষার মিলন
১৬৯

বললেম, ‘কপাল নয় রে, কুয়োর অভাব। পাড়ায় একখানা কুয়ো দিস নে কেন?’ তারা তখনই বললে, ‘আজ্ঞে কর্তার ইচ্ছে হলেই হয়।’ যাদের ঘরে আগুন লাগাবার বেলায় থাকে দৈব, তাদেরই জল দান করবার ভার কোনো-একটি কর্তার। সুতরাং যে করে থোক এরা একটা কর্তা পেলে বেঁচে যায়। তাই, এদের কপালে আর-সকল অভাবই থাকে, কিন্তু কোনো কালেই কর্তার অভাব হয় না।

 বিশ্বরাজ্যে দেবতা আমাদের স্বরাজ দিয়ে বসে আছেন। অর্থাৎ বিশ্বের নিয়মকে তিনি সাধারণের নিয়ম করে দিয়েছেন। এই নিয়মকে নিজের হাতে গ্রহণ করার দ্বারা আমরা প্রত্যেকে যে কর্তৃত্ব পেতে পারি, তার থেকে কেবলমাত্র আমাদের মোহ আমাদের বঞ্চিত করতে পারে, আর-কেউ না, আর কিছুতে না। এইজন্যেই আমাদের উপনিষৎ এই দেবতা সম্বন্ধে বলেছেন: যাথাতথ্যতোর্থ ব্যদধাৎ শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ। অর্থাৎ অর্থের বিধান তিনি যা করেছেন সে বিধান যথাতথ, তাতে খামখেয়ালি এতটুকুও নেই, এবং সে বিধান শাশ্বত কালের—আজ একরকম কাল একরকম নয়। এর মানে হচ্ছে, অর্থরাজ্যে তার বিধান তিনি চিরকালের জন্যে পাকা করে দিয়েছেন। এ না হলে মানুষকে চিরকাল তার আঁচল-ধরা হয়ে দুর্বল হয়ে থাকতে হত; কেবলই এ-ভয়ে ও-ভয়ে সে-ভয়ে পেয়াদার ঘুষ জুগিয়ে ফতুর হতে হত, কিন্তু তার পেয়াদার ছদ্মবেশধারী মিথ্যা বিভীষিকার হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়েছে যে দলিল সে হচ্ছে তাঁর বিশ্বরাজ্যে আমাদের স্বরাজের দলিল; তারই মহা আশ্বাসবাণী হচ্ছে: যাথাতথ্যতোহর্থান্‌ ব্যদধাৎ শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ। তিনি অনন্ত কাল থেকে অনন্ত কালের জন্য অর্থের যে বিধান করেছেন তা যথাতথ। তিনি তার সূর্য চন্দ্র গ্রহ নক্ষত্রে এই কথা লিখে দিয়েছেন, ‘বন্তুরাজ্যে আমাকে না হলেও তোমার চলবে, ওখান থেকে আমি আড়ালে দাঁড়ালুম; এক দিকে রইল আমার বিশ্বের নিয়ম, আর-এক দিকে