পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
কালান্তর

দিন আসিয়াছে।

 আজ আবার সমাজকে বাহবা দিবার পালা আরম্ভ হইল। জগতের মধ্যে কেবলমাত্র ভারতেরই জল-বাতাসে এমন একটি অদ্ভুত জাদু আছে। যে, এখানে নীতি আপনিই রীতিকে বরণ করিয়া লয়, আচারের পক্ষে বিচারের কোনাে প্রয়ােজনই হয় না। আমাদের কিছুই বানাইবার দরকার নাই, কেবল মানিয়া গেলেই চলে, এই বলিয়া নিজেকে অভিনন্দন করিতে বসিয়াছি।

 যে লোক কাজের উৎসাহে আছে, স্তবের উৎসাহে তাহার প্রয়ােজনই থাকে না। ইহার প্রমাণ দেখাে, আমরাও পশ্চিমসমুদ্রপারে গিয়া সেখানকার মানুষদের মুখের উপর বলিয়া আসিয়াছি, 'তােমরা মরিতে সিয়াছ? আত্মা বলিয়া পদার্থকে কেবলই বস্তু চাপা দিয়া তাহার দম বন্ধ করিবার জো করিয়াছ তােমরা স্থূলের উপাসক। এ-সব কঠোর কথা শুনিয়া তাহারা তাে মারমূর্তি ধরে নাই। বরঞ্চ ভালাে মানুষের মতাে মানিয়া লইয়াছে; মনে মনে বলিয়াছে, হবেও বা। আমাদের বয়স অল্প, আমরা কাজ বুঝি; ইহারা অত্যন্ত প্রাচীন, অতএব কাজ কামাই করা সম্বন্ধে ইহারা যে তত্ত্বকথাগুলা বলে নিশ্চয় সেগুলা ইহারা আমাদের চেয়ে ভালােই বােঝে। এই বলিয়া ইহারা আমাদিগকে দক্ষিণা দিয়া খুশি করিয়া বিদায় করিয়াছে এবং তাহার পরে আস্তিন গুটাইয়া যেমন কাজ করিতেছিল তেমনিই কাজ করিতে লাগিয়াছে।

 কেননা, হাজারই ইহাদিগকে নিন্দা করি আর ভয় দেখাই, ইহারা যে চলিতেছে, ইহারা যে প্রাণবান, তাহার প্রমাণ যে ইহাদের নিজেরই মধ্যে। মরার বাড়া গালি নাই, এ কথা ইহাদের পক্ষে খাটে না। ইহারা জানে মরার বাড়াও গালি আছে— বাঁচিয়া মরা। ইহাদের জীবনযাত্রায় সংকটের সীমা নাই, সমস্যার গ্রন্থিও বিস্তর, কিন্তু সকলের উপরে ইহাদিগকে ভরসা দিতেছে ইহাদের প্রাণ। এই জন্য ইহারা নিন্দা অনায়াসে সহিতে পারে