পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হিন্দুমুসলমান

ভারতবর্ষের সকল প্রদেশের সকল সমাজের ঐক্যে প্রতিষ্ঠিত এক মহাজাতিকে জাগিয়ে তুলে তার একচ্ছত্র আসন রচনা করব বলে দেশ-নেতারা পণ করেছেন।

 ঐ আসন জিনিসটা, অর্থাৎ যাকে বলে কন্সটিশ্যন, ওটা বাইরের, রাষ্ট্রশাসনব্যবস্থায় আমাদের পরস্পরের অধিকারনির্ণয় দিয়ে সেটা গড়েপিটে তুলতে হবে। তার নানা রকমের নমুনা নানা দেশের ইতিহাসে দেখেছি, তারই থেকে যাচাই বাছাই করে প্ল্যান ঠিক করা চলছে। এই ধারণা ছিল, ওটাকে পাকা করে খাড়া করবার বাধা বাইরে, অর্থাৎ বর্তমান কতৃপক্ষদের ইচ্ছার মধ্যে। তারই সঙ্গে রফা করবার, তার করবার কাজে কিছু কাল থেকে আমরা উঠে পড়ে লেগেছি।

 যখন মনে হল কাজ এগিয়েছে, হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে দেখি মস্ত বাধা নিজেদের মধ্যেই। গাড়িটাকে তীর্থে পৌছে দেবার প্রস্তাবে সারথি যদি বা আধ-রাজি হল ওটাকে আস্তাবল থেকে ঠেলে বের করবার সময় হুঁশ হল- একা গাড়িটার দুই চাকায় বিপরীত রকমের অমিল, চালাতে গেলেই উল্টে পড়বার জো হয়।

 যে বিরুদ্ধ মানুষটার সঙ্গে আমাদের বাইরের সম্বন্ধ, বিবাদ করে একদিন তাকে হটিয়ে বাহির করে দেওয়া দুঃসাধ্য হলেও নিতান্ত অসাধ্য নয়, সেখানে আমাদের হার-জিতের মামলা। কিন্তু ভিতরের লােকের বিবাদে কোনাে এক পক্ষ জিতলেও মােটের উপর সেটা হার, আর হারলেও শান্তি নেই। কোনাে পক্ষকে বাদ দেবারও জো নেই, আবার দাবিয়ে রাখতে গেলেও উৎপাতকে চিরকাল উত্তেজিত করে রাখাই হবে। ডান পাশের দাঁত বাঁ পাশের দাঁতকে নড়িয়ে দিয়ে যদি বড়াই করতে চায় তবে অবশেষে নিজে অনড় থাকবে না।