পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হিন্দুমুসলমান
৩২৯

বৈ কমবে এমন আশা আছে কি? বিষয়বুদ্ধির আমলে সহােদর ভাইদের মধ্যেও বচসা বেধে যায়। শেষকালে গুণ্ডাদের হাতেই লাঠি-সড়কির যােগে যমের দ্বারে চরম নিষ্পত্তির ভার পড়ে।

 এক দল মুসলমান সম্মিলিত নির্বাচনের বিরুদ্ধে, তার স্বতন্ত্র নির্বাচন-রীতি দাবি করেন এবং তাদের পক্ষের ওজন ভারী করবার জন্যে নানা বিশেষ সুযােগের বাটখারা বাড়িয়ে নিতে চান। যদি মুসলমানদের সবাই বা অধিকাংশ একমত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনরীতির দাবি করেন, এ নিজেদের পক্ষের ওজন বাড়িয়ে নিতে চান, তা হলে এমনতরাে দাবি মেনে নিয়েও আপস করতে মহাত্মাজি রাজি আছেন বলে বােধ হল। তা যদি হয়, তার প্রস্তাব মাথা পেতে নেওয়াই ভালাে। কেননা, ভারতবর্ষের তরফে রাষ্ট্রিক যে অধিকার আমাদের জয় করে নিতে হবে তার সুস্পষ্ট মূর্তি এবং সাধনার প্রণালী সমগ্রভাবে তারই মনে আছে। এ পর্যন্ত একমাত্র তিনিই সমস্ত ব্যাপারটাকে অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে প্রবল বাধার বিরুদ্ধে অগ্রসর করে এনেছেন। কাজ-উদ্ধারের দিকে দৃষ্টি রাখলে শেষ পর্যন্ত তাঁরই হাতে সারথ্যভার দেওয়া সংগত। তবু, একজনের বা এক দলের ব্যক্তিগত সহিষ্ণুতার প্রতি নির্ভর করে এ কথা ভুললে চলবে না যে, অধিকার-পরিবেশনের কোনাে এক পক্ষের প্রতি যদি পক্ষপাত করা হয় তবে সাধারণ মানবপ্রকৃতিতে সেই অবিচার সইবে না, এই নিয়ে একটা অশান্তি নিয়তই মারমুখাে হয়ে থেকে যাবে। বস্তুত এটা পরস্পরের বিবাদ মেটাবার পন্থা নয়। সকলেই যদি একজোট হয়ে প্রসন্নমনে এক-ঝোক আপস করতে রাজি হয় তা হলে ভাবনা নেই। কিন্তু মানুষের মন! তার কোনাে-একটা তারে যদি অত্যন্ত বেশি টান পড়ে তবে সুর যায় বিগড়ে, তখন সংগীতের দোহাই পাড়লেও সংগত মাটি হয়। ঠিক জানি না, কী ভাবে মহাত্মাজি এ সম্বন্ধে চিন্তা করছেন। হয়তাে গােলটেবিল-বৈঠকে