পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮০
কালান্তর

পক্ষে কঠিন; আমি পলিটিক্‌সে প্রবীণ নই। এ কথা জানি, যাঁরা শক্তিশালী তাঁরা নতুন পথে অসাধ্য সাধন করে থাকেন। মহাত্মাজিই তার প্রমাণ। তবু, তাঁর স্বীকৃত সকল অধ্যবসায়ই চরমতা লাভ করবে এমন কথা শ্রদ্ধেয় নয়। অন্য কোনো কর্মবীরের মনে নতুন সাধনার প্রেরণা যদি জাগে তা হলে দোহাই পাড়লেও সে বীর হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। সেজন্য হয়তো অভ্যস্ত পথে যূথভ্রষ্ট হয়ে অনভ্যস্ত পথে তাকে দল বাঁধতে হবে, সে দলের সম্পূর্ণ পরিচয় পেতে ও তাকে আয়ত্ত করতে সময় লাগবে। কন্‌গ্রেসের অভিমুখে যদি কোনো কৃতী নূতন পথ খুলতে বেরোন, আমি অনভিজ্ঞ, তাঁর সিদ্ধি কামনা করব, দেখব তাঁর কামনার অভিব্যক্তি— কিন্তু দূরের থেকে। কেননা দেশের জননায়কতার দায়িত্ব অত্যন্ত বৃহৎ— তার ভালো মন্দ ফলাফল বহুদূরব্যাপী, অনেক সময়েই তা অভাবনীয়। নিজের উপরে যাঁর স্থির বিশ্বাস আছে তিনিই তা বহন করতে পারেন, কিন্তু এ-সকল পোলিটিক্যাল প্রয়াস আমার পক্ষে স্বাভাবিক বলে আমি অনুভব করি নে। পরধর্মো ভয়াবহঃ। আমার নিজের এতদিনের অভ্যস্ত পথেই আমি সান্ত্বনা পাই। গণদেবতার পূজা সকল পূজার আরম্ভে, আমাদের শাস্ত্রে এই কথা বলে। স্বদেশসেবায় সেই প্রথম পূজার পদ্ধতি হচ্ছে এমন-সকল অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হওয়া যাতে জনগণ সুস্থ হয়, সবল হয়, শিক্ষিত হয়, আনন্দিত হয়, আত্মসম্মানে দীক্ষিত হয়, সুন্দরকে নির্মলকে আবাহন করে আনে আপন প্রাত্যহিক জীবিকার ক্ষেত্রে, এবং যাতে আত্মরক্ষায় আত্মকল্যাণসাধনে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রক্ষা করে সকলে সম্মিলিত হতে পারে। আমার সামান্য শক্তিতে ক্ষুদ্র পরিধির মধ্যে এই কাজে মন দিয়েছি প্রায় চল্লিশ বৎসর ধ’রে। মহাত্মাজি যখন স্বদেশকে জাগাবার ভার নিয়েছিলেন তখন একান্তমনে কামনা করেছিলুম, তিনি জনগণের বিচিত্র শক্তিকে বিচিত্র পথে উদবোধিত করবেন। কেননা আমি জানি, দেশকে পাওয়া বলতে বোঝায় তাকে তার পরিপূর্ণতার মধ্যে