পাতা:কালিদাস - রাজেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ.pdf/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VOy কালিদাস । যে স্থানে যে রসের অভিব্যক্তি হওয়া উচিত, ঠিক সেইরূপ করিয়া, অথবা তদপেক্ষাও যেন অধিকতর রসাভিব্যক্তি করিয়া, মালবিক মধুর-কণ্ঠে এই গান গাহিলেন। চিত্ৰাপিতের ন্যায়, অরবিন্দ-নিবিষ্ট ভ্ৰমর-পঙক্তির ন্যায়, সকলে নিস্পন্দভাবে, র্তাহার এই গান শুনিলেন, এবং অভিনয় দর্শন করিলেন। গানের এমনই পদ-বিন্যাস যে, ইহার প্রথম চরণে মালবিকার হৃদয়ের বৈরাগ্য, বাঞ্ছিত-লাভে নৈরাশ্য ; দ্বিতীয়ে আবার ঔৎসুক্য, যাহাকে পাইব না, তাঁহাকেই পাইবার জন্য আকাঙ্ক্ষা ; তৃতীয়ে সঙ্কল্প, এতদিন যাহার আশাপথ চাহিয়া আছেন, আজ তাঁহাকে পাইয়াছেন, কি করিলে তাহার সহিত মিলিতে পরিবেন, কি করিলে সেই চির-প্ৰাৰ্থিতের দাসী হইতে পরিবেন, —এই বাসনা; আর চতুর্থে আত্ম-সমৰ্পণ, তাঁহারই চরণে, সেই আরাধ্য দেবতার চরণে আত্মোৎসৰ্গ,-মালবিক পরাধীন, রাজার নন্দিনী হইয়াও পরিচারিকা, নিজের উপর তাহার কোনই কর্তৃত্ব নাই, যাঁহাকে চিরকাল অনিমেষ-নিয়নে নিরীক্ষণ করিলেও নয়নের তৃপ্তি জন্মে না, সেই অতৃপ্ত-দর্শন আজ সম্মুখে, কিন্তু প্ৰাণ ভরিয়া দেখিবার পর্য্যন্ত সমর্থ্য নাই, কি করিয়া তোমাকে দেখিব ? আমি পরাধীন, তোমার দাসীত্ব-পদ-কাঙিক্ষণী,-এই প্ৰকার আত্ম-সমৰ্পণ ; গানের চরণচতুষ্টয়ে, এইভাবে, যথাক্রমে, বৈরাগ্য, ঔৎসুক্য, সংস্কল্প ও আত্ম-সমৰ্পণ-এই চারিটি ভাব সুপরিস্ফাট। রাজা অনন্য-মনে মালবিকার নৃত্যগীতাদি অনুভব করিলেন।