এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
যা বীণাবিরদণ্ডমণ্ডিতভূজা যা শুভ্রবস্ত্রাবৃতা।।
জ্ঞাত হৈলে দোঁহাকারে করাইব রণ। সম বংশ হৈলে যুদ্ধ হয় সুশোভন।। নাহি অভিমান সম জয় পরাজয়। রাজপুত্র ইতর লোকেতে যুদ্ধ নয়।। শুনিয়া কৃপের কর্ণ এতেক বচন। হেঁট মুখ হৈল বীর বিরিস-বদন।। না দিল উত্তর কিছু কর্ণ মহাবল। বৃষ্টি হৈলে ছিন্ন যেন কমলের দল।। কৃপেরে চাহিয়া বলে রাজা দুর্য্যোধন। বিবিধ প্রকারে রাজা শাস্ত্রের বচন।। সহজ বংশজ আর লোকে যারে পূজে। সবা হৈতে বীর্য্যবন্ত যেই জন তেজে।। রাজা হৈলে পার্থ যদি করিবেন রণ। আজি আমি কর্ণে রাজা করিব এখন।। অঙ্গদেশে কর্ণ আজি হবে দণ্ডধর। এত বলি আজ্ঞা দিল ডাকি অনুচর।। অভিষেক-দ্রব্য আনাইল ততক্ষণে। বসাইল কর্ণবীরে কনক-আসনে।। শিরেতে ধরিল ছত্র রতন-মণ্ডিত। রাজগণে চামর ঢুলায় চারিভিত।। কনক-অঞ্জলি সব ফেলিল নিছিয়া। ভীষ্ম দ্রোণ রহিলেন বিস্মিত হইয়া।। তবে কর্ণ মহাবীর প্রসন্নবদন। দুর্য্যোধন প্রতি বলে হৈয়া হৃষ্টমন।। দিলা অঙ্গদেশেতে আমার অধিকার। আজ্ঞা কর প্রিয় কিবা করিব তোমার।। দুর্য্যোধন বলে অন্য নাহি প্রয়োজন। হইব তোমার সখা এই মম মন।। অচল সৌহার্দ্র্য ইচ্ছা তোমার সহিতে। এই মম বাঞ্ছা আজ্ঞা কর তুমি মিতে।। কর্ণ বলে সখা মম সুদৃঢ় বচন। পরম স্নেহেতে দোঁহে করি আলিঙ্গন।। হেনকালে অধিরথ জাতিতে সারথি। লোকমুখে শুনে পুত্র হৈল নরপতি।। অধিক বয়সে সেই চলে যষ্ঠিভরে। উঠিতে পড়িতে বুড়া যায় দেখিবারে।। বৃদ্ধ দেখি সব লোক ছাড়ি দিল পথ। সভামধ্যে প্রবেশ করিল অধিরথ।। অধিরথে দেখি কর্ণ আস্তে ব্যস্তে উঠি। প্রণাম করিল শির ভূমিতলে লুঠি।। কর্ণ প্রণমিলা অধিরথের চরণে। দেখিয়া বিস্ময় মানিলেক সভাজনে।। পাণ্ডব জানিল, কর্ণ সুতের নন্দন। উপহাস করি ভীম বলিল বচন।। অর্জ্জুন সহিত রণে হও শক্তিমন্ত। এখন সে জানিলাম তব আদি অন্ত।। সভাতে সম্ভ্রমে কার্য্য কর জাতিমত। হাতেতে চাবুক ল'য়ে চালা গিয়া রথ।। আরে নরাধম তোর কি বড় যোগ্যতা। অঙ্গদেশে রাজা হও এ অদ্ভুত কথা।। যজ্ঞের নিকটে যদি সারমেয় যায়। যজ্ঞের বিভাগ হবি কুকুর কি পায়।। ভীমবাক্য শুনি কর্ণের কাঁপে অধর। নিশ্বাস ছাড়িয়া কর্ণ চাহে দিনকর।। ভীমবাক্যে মহাক্রুদ্ধ হৈল দুর্য্যোধন। অস্ত্র লৈয়া বলে দম্ভে মেঘের গর্জ্জন।। সখা করিলাম কর্ণে সভার ভিতর। একথা কহিতে যোগ্য নহে বৃকোদর।। শ্রেষ্ঠ বলি ক্ষত্রমধ্যে বলিষ্ঠ যে জন। শূরের নদীর অন্ত পায় কোনজন।। জল হৈতে শীতল যে না শুনি শ্রবনে। তাহাতে জন্মিল অগ্নি দহে ত্রিভূবনে।। দধীচির হাড়েতে বজ্রের হৈল জন্ম। দানব দলন করি করে সুর-কর্ম্ম।। কার্ত্তিকেয় জন্ম কেহ দৃঢ় নাহি জানে। কেহ বলে শিব হৈতে কেহ বা আগুনে।। গঙ্গার নন্দন কেহ বলে কৃত্তিকার। জন্মের নিয়ম নাহি পূজ্য সবাকার।। বিপ্র হৈতে ক্ষত্রজন্ম সর্ব্বকাল জানি। ক্ষত্র হৈতে বিপ্র হৈল বিশ্বামিত্র মুনি।। কলসে জন্মিল দ্রোণ কৃপ শরবনে। বশিষ্ঠ অপ্সরীপুত্র কেবা নাহি জানে।।