পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্ঞানপ্রদায় করুণামৃত সাগরায়।।

 নিরন্তর ভূত প্রেত লইয়া তার খেলা।
 না নিলাম তাহারে করিয়া অবহেলা।।
 শচীপতি পুরন্দর সহস্রলোচন।
 ত্রৈলোক্য পালিত ধাতা কৈল নিয়োজন।।
 কভু ঐরাবত কভু উচ্চৈঃশ্রবা রথে।
 বিনা বাহনেতে ইন্দ্র না পারে চলিতে।।
 তারে না নিলাম আমি ইহার লাগিয়া।
 তথাপিও আছে স্বর্গে আমার হইয়া।।
 তোমার যে স্বামী কৃষ্ণ রূপে নাহি সীমা।
 তিনলোক মধ্যে দিব কাহাতে উপমা।।
 যথায় যাইব তথা সঙ্গে করি লব।
 অনুক্ষণ দিবানিশি নয়নে দেখিব।।
 জন্মে জন্মে এই মম মনে বাঞ্ছা ছিল।
 অনেক তপের ফলে বিধি মিলাইল।।
 নয়ন মুদিয়া সদা ধ্যান করি যাকে।
 তাঁহাকে পাইয়া হাতে কি দেব তোমাকে।।
 এ কথা শুনিয়া সতী হলেন মূর্চ্ছিতা।
 নাহি জ্ঞান সত্যভামা মৃতা কি জীবিতা।।
 দেখিয়া সতীর কষ্ট কৃষ্ণে হৈল দয়া।
 নারদে বলেন ছাড়হ মুনি মায়া।।
 নারদ বলে কর্ম্ম ভুঞ্জুক আপন।
 তোমারে ত্যাজিয়া দিল ব্রতফলে মন।।
 শ্রীকৃষ্ণ বলেন হয় সহজে স্ত্রীজাতি।
 কোথা পাইবেক জ্ঞান তোমার যেমতি।।
 শরীরে নাহিক প্রাণ, হেন লয় মনে।
 যোগবলে আত্মা মুনি, দেহ এইক্ষণে।।
 দেখিয়া সতীর কষ্ট মুনি চমৎকার।
 উঠহ বলিয়া ডাকিলেন বার বার।।
 মুনির আশ্বাসে দেবী পাইয়া চেতন।
 উঠিয়া ধরেন পুনঃ মুনির চরণ।।
 নারদ বলেন দেবী এক কর্ম্ম কর।
 দান দিয়া লৈতে চাহ অধর্ম্ম বিস্তর।।
 গোবিন্দ তৌলিয়া দেহ আমারে রতন।
 পাইবা ব্রতের ফল শাস্ত্রের লিখন।।
 শুনি সত্যভামা যান হইয়া উল্লাস।
 পুত্রগণে ডাকিয়া কহেন মৃদুভাষ।।
 করহ তুলের সজ্জা যে আছে বিহিত।
 মম গৃহ হৈতে রত্ন আনহ ত্বরিত।।
 আজ্ঞা পেয়ে কামাদি যতেক পুত্রগণ।
 কনকে নির্ম্মাণ তুলা কৈল ততক্ষণ।।
 একভিতে চড়াইল দৈবকীনন্দনে।
 আর ভিতে চড়াইল যত রত্নগণে।।
 সত্যভামা গৃহে রত্ন যতেক আছিল।
 তুলে চড়াইল তবু সমান নহিল।।
 রুক্মিনী কালিন্দী নগ্নজিতী জাম্ববতী।
 যে যাহার ঘর হৈতে আনে শীঘ্রগতি।।
 চড়াইল তুল তবু সমতুল নহে।
 ষোড়শ সহস্র কন্যা নিজ ধন বহে।।
 কৃষ্ণের ভাণ্ডারে ধন কুবের জিনিয়া।
 ত্বরাত্বরি চড়াইল তুলে সব লৈয়া।।
 না হয় কৃষ্ণের সম অপরূপ কথা।
 দ্বারকাবাসীর দ্রব্য যার ছিল যথা।।
 শকটে উষ্ট্রেতে বৃষ বহে অনুক্ষণ।
 নাহিক কৃষ্ণের সম দেখে সর্ব্বজন।।
 পর্ব্বত আকার চড়াইল রত্নগণে।
 ভূমি হৈতে তুলিতে নারিল নারায়ণে।।
 দেখি সত্যভামা দেবী করেন রোদন।
 ক্রোধমুখে বলেন নারদ তপোধন।।
 উপেন্দ্রানী বলিয়া বলিস এই মুখে।
 রত্নে জুখি উদ্ধারিতে নারিলি স্বামিকে।।
 শিশু প্রায় পুনঃ পুনঃ করিস রোদন।
 হেন জন হেন ব্রত করে কি কারণ।।
 এবে জানিলাম ধন না পারিলি দিতে।
 উঠ বলি নারদ ধরেন কৃষ্ণ হাতে।।
 শুনি সত্যভামা মুখে উড়িল যে ধূলি।
 ভূমে গড়াগড়ি যায় সবে মুক্তচুলি।।
 হেনমতে কান্দে সব যাদবী যাদব।
 হৃদয়ে চিন্তিয়া তবে বলেন উদ্ধব।।
 আপনি শ্রীমুখে কহিছেন বার বার।
 আমা হৈতা নাম বিনা বড় নাহি আর।।
 চিন্তিয়া বলিল সবে মম বোল ধর।
 যত রত্ন আছে তুলে ফেলহ সত্বর।।