পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৫
হেমলক

পাগড়ী দিয়ে মুছে প্রেম-সঙ্গীত গাইতে গাইতে ইচ্ছাসুখে মন্থর গতিতে প্রস্থান করে।

 ও আসলে তো তাদেরি একজন! সে রক্ত কোথায় যাবে? যদিও অতি শৈশব থেকে একান্ত ভদ্র বাঙালী পরিবারে পুত্রাধিক স্নেহে ও শিক্ষায় ও প্রতিপালিত হয়েছিল, কিন্তু একটু বড় হতে না হতে রক্তের গন্ধে বাঘের মতই মেতে উঠে নিজের পৈতৃক হিংস্র-প্রকৃতির সন্ধান ও খুঁজে পেলে। কার সাধ্য রক্তের বিষ শোধন করে,—রক্ত যে কথা কয়।

 সকল কথা একটু গোড়া থেকেই তা হলে বলি। আফ্রিদির যুদ্ধের সময় ইংরাজ বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে এদেশেই বহু সামরিক কর্ম্মচারী ফ্রণ্টিয়ারের বৃটিশ চাকরীতে চাকরী নিয়ে যায়। হাজরা সাহেব বা ক্যাপটেন হাজরাও তাদের মধ্যের একজন। তিনি শুদ্ধ রুগী বাঁচাবার বিদ্যায় নয়, নিরোগী জোয়ান যোদ্ধা মারবার বিদ্যাও বেশ ভালভাবে শিখেছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে বহুবার তার পরীক্ষা দিয়ে বৃটিশ মহলে খুব নামও করেছিলেন। হ্যাভেলক সাহেবকে যখন আফ্রিদিরা চুরি করে নিয়ে যায়, সেই নিরুদ্দিষ্টের সার্চ-পার্টিতে তিনিও স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছিলেন। ইতিহাসই বলেছে, জানেন হয়ত, তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, কিন্তু যাকে এই অনুসন্ধানফলে না খুঁজতেই পাওয়া গেছলো তার কথা এ জগতে ক’জনই বা জানে। বহু গ্রাম ধ্বংস হলো, বহু দোষী-নির্দ্দোষী নির্ব্বিশেষে নিহত হলো,—তবু তখন এটম ছেড়ে মামুলী বম্বিংএরও কেউ স্বপ্ন দেখেনি। মেসিনগানই সেদিনে যথেষ্ট ছিল।

 এক গ্রাম্য-সর্দ্দারের সঙ্গে ক্যাপ্টেন হাজরার রীতিমত যুদ্ধ হয়, দুর্দ্ধর্ষ বিরাট মূর্ত্তি সাত ফুটের ওপর লম্বা—পাঠান হলে কি হয়, তার সেকেলে গাদা বন্দুক হাজরা সাহেবের মার্টিনী রাইফেলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারলে না, তাঁর অব্যর্থ গুলিতে সে মরলো।