পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু

 “তাই বা কি করে হবে, বল? স্বামীজী তো আর আমার হুকুমের চাকর ন’ন, তিনি তোমার জন্যে অত ত্যাগ স্বীকার করবেনই বা কেন? জগতে তুমি নিজের মেয়ের জন্যে পর্য্যন্ত এতটুকু দয়ামায়া করোনি, খালি দুঃখই দিয়েছ, আর অন্য লোকে তোমায় মাথায় তুলে নাচবে?”

 সুনীতি এই সকল কাণ্ডকারখানা দেখিয়া অবাক্ অভিভূত হইয়া গিয়া হাঁটুর উপর চিবুক রাখিয়া অদৃশ্য হস্তের লেখার মধ্যে আত্মহারা হইয়া ডুবিয়া ছিল, এই কথায় ঈষৎ চঞ্চল হইয়া উঠিল, যদি বাবা এই কঠিন অনুযোগ শুনিয়া ফের ক্ষেপিয়া যান! মনে মনে সে মিনতি করিয়া কহিতে লাগিল, “না মা, ওমা! আমার জন্যে বাবাকে তুমি কিছু বলো না মা! ওঁর যে মাথা খারাপ, আগে কত তো ভালই বেসেছেন, দেখেছ ত’ সবই? এই রকম কি ছিলেন? কি করবেন, আমারই কপাল।”

 চন্দ্রকুমার একটুও কিন্তু চটিলেন না এবং আরও বেশী নরম শান্ত স্বরেই কহিলেন, “আজ থেকে আমি কারুকে কোন দুঃখ আর দেবো না, তুমি যে আজ আমার সকল দুঃখ মিটিয়ে দিয়েছ সুকু! এইবার বলো কি করলে আমি মাঝে মাঝে তোমায় কাছে পাবো?”

 “এর একটিমাত্র উপায় দেখতে পাচ্চি,—আর কিছুই তো কোন দিকে খুঁজে পাচ্চি না; কিন্তু—”

 “বলো, বলো, তুমি যা বলবে আমি তাই করবো, হ্যাঁ করতে বলবে, যা’ করতে বলবে,—এই তোমার দিব্বি করে বলছি”— চন্দ্রকুমার পেনসিল ছুঁইয়া আগ্রহে হাঁপাইতে লাগিলেন। সুকুমারী বলিলেন,—“দেখ, হঠাৎ কিছু না ভেবে-চিন্তেই একটা পাকা কথা দেওয়া সঙ্গত নয়, এসব তো ঠিক তোমাদের পৃথিবীর ব্যাপার নয়, মিথ্যে বলা, ধোঁকা দেওয়া এসব এখানে বাতিল।”