পাতা:গল্পকল্প - পরশুরাম.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিদ্ধিনাথের প্রলাপ

দাড়িগোঁফের জঙ্গল, মাথায় জটা, পড়া চুল, হাতে একটা হাড়ের ডাণ্ডা। সে বউ খুঁজতে বেরিয়েছে। নদীর ধারে একটা মেয়ে গ‍ুগলি কুড়চ্ছে, এই বউমার সঙ্গে একটু মিল আছে। পুরুষটা কোনও প্রেমের কথা বললে না, উপহার দিলে না, খোশামোদও করলে না, এসেই ধাঁই ক’রে এক ঘা লাগালে। মেয়েটা মুখে থুবড়ে পড়ল, কপাল ফেটে রক্ত পড়তে লাগল। তার পর তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে লোকটা নিজের আস্তানায় এল এবং নাকে বেতের আংটা পরিয়ে তাতে দড়ি লাগিয়ে একটা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিলে, যেমন বলদকে বাঁধা হয়। তব্দ মেয়েটা পালাবার চেষ্টা করছে দেখে তার পায়ের পাতা চিরে রক্তপাত করলে, দদ কান ফুঁড়ে কড়া পরিয়ে দিলে, গলায় হাতে কোমরে আর পায়ে চামড়ার বেড়ি লাগিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেললে। এইরকম আষ্টেপৃষ্ঠে বন্ধনের পর ক্রমে ক্রমে মেয়েটা পোষ মানল, স্বামীর ওপর ভালবাসাও হ’ল। অল্প কালের মধ্যে সকল মেয়েরই ধারণা হ’ল যে নির্যাতনের চিহ্নই হচ্ছে অলংকার আর সৌভাগ্যবতীর লক্ষণ। তার পর হাজার হাজার বৎসর কেটে গেল, ঘরে বউ আনা সহজ হ’ল, সোনা রূপোর গহনার চলন হ’ল, কিন্তু প্রসাধনের রীতি আর গহনার ছাঁদে আদিম বর্বরতার ছাপ রয়ে গেল। সেকালে যা কপালের রক্ত ছিল তা হ’ল সিঁদুর, পায়ের রক্ত হ’ল আলতা। পূর্বে যা বউ বাঁধবার আংটা কড়া আর বেড়ি ছিল, পরে তা নথ মাকড়ি হার বালা গোট আর মলে পরিবর্তিত হ’ল।

১২৭