সুকুমারী। এ কিরকম বিশ্রী ঠাট্টা। ছি ছি, সকলই অনাসৃষ্টি! দেখাে দেখি। আমার বুকে এখনাে ধড়াস্-ধড়াস্ করছে। সতীশ মদ ধরেছে বুঝি!
সতীশ। পালাও—তােমার ছেলেকে নিয়ে এখনই পালাও। নইলে তােমাদের রক্ষা নেই।
হরেনকে লইয়া ত্রস্তপদে সুকুমারীর পলায়ন
শশধর। সতীশ, অমন উতলা হােয়াে না। ব্যাপারটা কী বলো। হরেনকে কার হাত হতে রক্ষা করবার জন্য ডেকেছিলে।
সতীশ। আমার হাত হতে। (পিস্তল দেখাইয়া) এই দেখাে, মেসােমশায়।
দ্রুতপদে বিধুমুখীর প্রবেশ
বিধু। সতীশ, তুই কোথায় কী সর্বনাশ করে এসেছিস বল দেখি। আপিসের সাহেব পুলিশ সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়িতে খানাতল্লাসি করতে এসেছে। যদি পালাতে হয় তাে এইবেলা পালা। হায় ভগবান! আমি তাে কোনাে পাপ করি নি, আমারই অদৃষ্টে এত দুঃখ ঘটে কেন।
সতীশ। ভয় নেই—পালাবার উপায় আমার হাতেই আছে।
শশধর। তবে কি তুমি—
সতীশ। তাই বটে মেসােমশায়—যা সন্দেহ করছ তাই। আমি চুরি করে মাসির ঋণ শােধ করেছি। আমি চোর। মা, শুনে খুশি হবে, আমি চোর, আমি খুনী! এখন আর কাঁদতে হবে না—যাও যাও, আমার সম্মুখ হতে যাও। আমার অসহ্য বােধ হচ্ছে।
শশধর। সতীশ, তুমি আমার কাছেও তাে কিছু ঋণী আছ, তাই শােধ করে যাও।
সতীশ। বলাে, কেমন করে শােধ করব। কী আমি দিতে পারি। কী চাও তুমি।
শশধর। ওই পিস্তলটা দাও।
সতীশ। এই দিলাম। আমি জেলেই যাব। না গেলে আমার পাপের ঋণশােধ হবে না।
শশধর। পাপের ঋণ শাস্তির দ্বারা শােধ হয় না সতীশ, কর্মের দ্বারাই শােধ হয়। তুমি নিশ্চয় জেনাে, আমি অনুরােধ করলে তােমার বড়ােসাহেব তােমাকে জেলে দেবেন না। এখন হতে জীবনকে সার্থক করে বেঁচে থাকো।
সতীশ। মেসোমশায়, এখন আমার পক্ষে বাঁচা যে কত কঠিন তা তুমি জান না—মরব নিশ্চয় জেনে পায়ের তলা হতে আমার শেষ সুখের অবলম্বনটা আমি পদাঘাতে ফেলে দিয়ে এসেছি—এখন কী নিয়ে বাঁচব।
শশধর। তবু বাঁচতে হবে, আমার ঋণের এই শােধ,—আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালাতে পারবে না।
সতীশ। তবে তাই হবে।
শশধর। আমার একটা অনুরােধ শোনো। তােমার মাকে আর মাসিকে অন্তরের সহিত ক্ষমা করাে।
সতীশ। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা করতে পার, তবে এ সংসারে কে এমন থাকতে পারে যাকে আমি ক্ষমা করতে না পারি।
প্রণাম করিয়া
মা, আশীর্বাদ করাে আমি সব যেন সহ্য করতে পারি—আমার সকল দোষগুণ