83 S গল্পগুচ্ছ ভূপতি দ্বিতীয়বার কোনো উত্তর না পাইয়া পনবার স্নেহসিক্ত স্বরে কহিল, “আমি সবাদা তোমার কাছে আসতে পারি নে চার, সেজন্যে আমি অপরাধী, কিন্তু আর হবে না। এখন থেকে দিনরাত কাগজ নিয়ে থাকব না। আমাকে তুমি যতটা চাও ততটাই পাবে।” চার অধীর হইয়া বলিল, “সেজন্যে নয়।” ভূপতি কহিল, “তবে কী জন্যে।" বলিয়া খাটের উপর বসিল। চার বিরক্তির সবর গোপন করিতে না পারিয়া কহিল, “সে এখন থাক, রাত্রে বলব।" ভূপতি মহন্তকাল স্তব্ধ থাকিয়া কহিল, "আচ্ছা, এখন থাক।" বলিয়া আস্তে আস্তে উঠিয়া বাহিরে চলিয়া গেল। তাহার নিজের একটা-কী কথা বলিবার ছিল, সে আর বলা হইল না । ভূপতি যে একটা ক্ষোভ পাইয়া গেল, চারার কাছে তাহা অগোচর রহিল না। মনে হইল, “ফিরিয়া ডাকি।" কিন্তু ডাকিয়া কী কথা বলিবে। অনন্তাপে তাহাকে বিধ করিল, কিন্তু কোনো প্রতিকার সে খুজিয়া পাইল না। রাত্রি হইল। চার আজ সবিশেষ যত্ন করিয়া ভূপতির রাত্রের আহার সাজাইল এবং নিজে পাখা হাতে করিয়া বসিয়া রহিল। এমন সময় শুনিতে পাইল মন্দা উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতেছে, "ব্রজ, ব্রজ।" ব্ৰজ-চাকর সাড়া দিলে জিজ্ঞাসা করিল, "অমলবাবরে খাওয়া হয়েছে কি " ব্রজ উত্তর করিল, “হয়েছে।" মন্দা কহিল, "খাওয়া হয়ে গেছে অথচ পান নিয়ে গেলি নে যে ?” মন্দা ব্রজকে অত্যন্ত তিরস্কার করিতে লাগিল । এমন সময়ে ভূপতি অন্তঃপুরে আসিয়া আহারে বসিল, চার পাখা করিতে লাগিল । চার আজ প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল, ভূপতির সঙ্গে প্রফুল্ল স্নিগ্ধভাবে নানা কথা কহিবে। কথাবাত আগে হইতে ভাবিয়া প্রস্তুত হইয়া বসিয়া ছিল। কিন্তু মন্দার কণ্ঠস্বরে তাহার বিস্তৃত আয়োজন সমস্ত ভাঙিয়া দিল, আহারকালে ভূপতিকে সে একটি কথাও বলিতে পারিল না। ভূপতিও অত্যন্ত বিমৰ্ষ অন্যমনস্ক হইয়া ছিল । সে ভালো করিয়া খাইল না, চার একবার কেবল জিজ্ঞাসা করিল, “কিছু খাচ্ছ না যে ?” ভূপতি প্রতিবাদ করিয়া কহিল, “কেন। কম খাই নি তো।" শয়নঘরে উভয়ে একত্র হইলে ভূপতি কহিল, "আজ রাত্রে তুমি কী বলবে বলেছিলে ।” চার কহিল, “দেখো, কিছুদিন থেকে মন্দার ব্যবহার আমার ভালো বোধ হচ্ছে না। ওকে এখানে রাখতে আমার আর সাহস হয় না ।" ভূপতি। কেন, কী করেছে। চার। অমলের সঙ্গে ও এমনি ভাবে চলে যে, সে দেখলে লঙ্কজা হয়। ভূপতি হাসিয়া উঠিয়া কহিল, "হাঁ, তুমি পাগল হয়েছ! অমল ছেলেমানষে। সেদিনকার ছেলে--” চার। তুমি তো ঘরের খবর কিছুই রাখ না, কেবল বাইরের খবর কুড়িয়ে বেড়াও ।
পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৩
অবয়ব