&సిO গল্পগুচ্ছ অগ্রসর হইয়া তাহার হাত হইতে পেয়ালা লইল। এই মানবজন্মের হরিণশিশুটিকে তুচ্ছ কারণে কি বেদনা দেওয়া যায়। যতীন যেমনি পেয়ালা লইল অমনি দেখিল, বারান্দার অপর প্রান্তে পটল সহসা আবিভূত হইয়া নিঃশব্দহাস্যে যতীনকে কিল দেখাইল ; ভাবটা এই যে, “কেমন ধরা পড়িয়াছ।” সেইদিন সন্ধ্যার সময় যতীন একখানি ডাক্তার কাগজ পড়িতেছিল, এমন সময় ফলের গন্ধে চকিত হইয়া উঠিয়া দেখিল, কুড়ানি বকুলের মালা হাতে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। যতীন মনে মনে কহিল, বড়োই বাড়াবাড়ি হইতেছে— পটলের এই নিষ্ঠর আমোদে আর প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হয় না।’ কুড়ানিকে বলিল, “ছি ছি কুড়ানি, তোমাকে লইয়া তোমার দিদি আমোদ করিতেছেন, তুমি বঝিতে পার না।” কথা শেষ করিতে না করিতেই কুড়ানি কত সংকুচিত ভাবে প্রস্থানের উপক্ৰম করিল। যতীন তখন তাড়াতাড়ি তাহাকে ডাকিয়া কহিল, “কুড়ানি, দেখি, তোমার মালা দেখি।” বলিয়া মালাটি তাহার হাত হইতে লইল। কুড়ানির মখে একটি আনন্দের উজ্জলতা ফটিয়া উঠিল, অন্তরাল হইতে সেই মহতে একটি উচ্চহাস্যের উচ্ছৰাসধ্বনি শনা গেল। , পরদিন সকালে উপদ্রব করিবার জন্য পটল যতীনের ঘরে গিয়া দেখিল, ঘর শান্য। একখানি কাগজে কেবল লেখা আছে– “পালাইলাম। শ্রীযতীন।” “ও কুড়ানি, তোর বর যে পালাইল। তাহাকে রাখিতে পারিলি নে!” বলিয়া কুড়ানির বেণী ধরিয়া নাড়া দিয়া পটল ঘরকন্নার কাজে চলিয়া গেল। কথাটা বুঝিতে কুড়ানির একটা সময় গেল। সে ছবির মতো দাঁড়াইয়া পিথরদটিতে সম্মখে চাহিয়া রহিল। তার পর ধীরে ধীরে যতীনের ঘরে আসিয়া দেখিল, তাহার ঘর খালি। তার পবসন্ধ্যার উপহারের মালাটা টেবিলের উপর পড়িয়া আছে। বসন্তের প্রাতঃকালটি স্নিগ্ধসন্দর ; রৌদ্রটি কম্পিত কৃষ্ণচড়ার শাখার ভিতর দিয়া ছায়ার সহিত মিশিয়া বারান্দার উপর আসিয়া পড়িয়াছে। কাঠবিড়ালি লেজ পিঠে তুলিয়া ছাটাছটি করিতেছে এবং সকল পাখি মিলিয়া নানা সরে গান গাহিয়া তাহাদের বক্তব্য বিষয় কিছতেই শেষ করিতে পারিতেছে না। পথিবীর এই কোণটুকুতে, এই খানিকটা ঘনপল্লব ছায়া এবং রৌদ্ররচিত জগৎখণ্ডের মধ্যে প্রাণের আনন্দ ফটিয়া উঠিতেছিল ; তাহারই মাঝখানে ঐ বন্ধিহীন বালিকা তাহার জীবনের, তাহার চারি দিকের সংগত কোনো অর্থ ববিয়া উঠিতে পারিতেছিল না। সমস্তই কঠিন প্রহেলিকা। কী হইল, কেন এমন হইল, তার পরে এই প্রভাত, এই গহ, এই যাহা-কিছু সমস্তই এমন একেবারে শান্য হইয়া গেল কেন। যাহার বঝিবার সামথ অলপ তাহাকে হঠাৎ একদিন নিজ হাদয়ের এই অতল বেদনার রহস্যগভে কোনো প্রদীপ হাতে না দিয়া কে নামাইয়া দিল। জগতের এই সহজ-উচ্ছসিত প্রাণের রাজ্যে, এই গাছপালা-মগপক্ষীর আত্মবিস্মত কলরবের মধ্যে কে তাহাকে আবার টানিয়া তুলিতে পারবে। পটল ঘরকন্নার কাজ সারিয়া কুড়ানির সন্ধান চাইতে আসিয়া দেখিল, সে যতীনের পরিত্যন্ত ঘরে তাহার খাটের খরা ধরিয়া মাটিতে পড়িয়া আছে—শন্য শয্যাটাকে যেন পায়ে ধরিয়া সাধিতেছে। তাহার বকের ভিতরে যে-একটি সাধার পার লকোনো ছিল সেইটে যেন শন্যতার চরণে বখা আশ্বাসে উপড়ে করিরা ঢালিয়া দিতেছে
পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৯
অবয়ব