ঝুপ্ ঝুপ্ করিয়া বৃষ্টি পড়ে, মেঘে অন্ধকার হইয়া থাকে— গৃহদ্বারে মায়ের কাছে বসিয়া সমুদ্রের দিকে চাহিয়া রাজপুত্র বলে, “মা, একটা খুব দূর দেশের গল্প বলো।” মা অনেক ক্ষণ ধরিয়া তাঁহার বাল্যশ্রুত এক অপূর্ব দেশের অপূর্ব গল্প বলিতেন; বৃষ্টির ঝর্ঝর্ শব্দের মধ্যে সেই গল্প শুনিয়া রাজপুত্রের হৃদয় উদাস হইয়া যাইত।
একদিন সদাগরের পুত্র আসিয়া রাজপুত্রকে কহিল, “সাঙাত, পড়াশুনা তো সাঙ্গ করিয়াছি; এখন একবার দেশভ্রমণে বাহির হইব, তাই বিদায় লইতে আসিলাম।”
রাজার পুত্র কহিল, “আমিও তোমার সঙ্গে যাইব।”
কোটালের পুত্র কহিল, “আমাকে কি একা ফেলিয়া যাইবে। আমিও তোমাদের সঙ্গী।”
রাজপুত্র দুঃখিনী মাকে গিয়া বলিল, “মা, আমি ভ্রমণে বাহির হইতেছি— এবার তোমার দুঃখমোচনের উপায় করিয়া আসিব।”
তিন বন্ধুতে বাহির হইয়া পড়িল।
৩
সমুদ্রে সদাগরের দ্বাদশতরী প্রস্তুত ছিল, তিন বন্ধু চড়িয়া বসিল। দক্ষিণের বাতাসে পাল ভরিয়া উঠিল, নৌকাগুলা রাজপুত্রের হৃদয়বাসনার মতো ছুটিয়া চলিল।
শঙ্খদ্বীপে গিয়া এক-নৌকা শঙ্খ, চন্দনদ্বীপে গিয়া এক-নৌকা চন্দন, প্রবালদ্বীপে গিয়া এক-নৌকা প্রবাল বোঝাই হইল।
তাহার পর আর চারি বৎসরে গজদন্ত মৃগনাভি লবঙ্গ জায়ফলে যখন আরচারিটি নৌকা পূর্ণ হইল তখন সহসা একটা বিপর্যয় ঝড় আসিল।
সবকটা নৌকা ডুবিল, কেবল একটি নৌকা তিন বন্ধুকে একটা দ্বীপে আছাড়িয়া ফেলিয়া খানখান হইয়া গেল।
এই দ্বীপে তাসের টেক্কা, তাসের সাহেব, তাসের বিবি, তাসের গোলাম যথানিয়মে বাস করে এবং দহলা-নহলাগুলাও তাহাদের পদানুবর্তী হইয়া যথানিয়মে কাল কাটায়।