পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ গল্পগছে এই বীপে তাসের টেক্কা, তাসের সাহেব, তাসের বিবি, তাসের গোলাম যথানিয়মে বাস করে এবং দহলা-নহলাগলোও তাহদের পদানবেতী হইয়া যথানিয়মে কাল কাটায়। 8 তাসের রাজ্যে এতদিন কোনো উপদ্রব ছিল না। এই প্রথম গোলযোগের সত্রপাত झ्ङेल । এতদিন পরে প্রথম এই একটা তক উঠিল— এই-যে তিনটে লোক হঠাৎ একদিন সন্ধ্যাবেলায় সমুদ্র হইতে উঠিয়া আসিল, ইহাদিগকে কোন শ্রেণীতে ফেলা যাইবে। প্রথমত, ইহারা কোন জাতি— টেক্কা, সাহেব, গোলাম, না দহলা-নহলা ? দ্বিতীয়ত, ইহারা কোন গোত্র-ইকাবন, চিড়তন, হরতন, অথবা রহিতন ? এ-সমস্ত সিথর না হইলে ইহাদের সহিত কোনোরপ ব্যবহার করাই কঠিন । ইহারা কাহার অন্ন খাইবে, কাহার সহিত বাস করিবে— ইহাদের মধ্যে অধিকারভেদ কেই বা বায়কোণে, কেই বা নৈঋতকোণে, কেই বা ঈশানকোণে মাথা রাখিয়া এবং কেই বা দণ্ডায়মান হইয়া নিদ্রা দিবে, তাহার কিছুই সিথর হয় না । এ রাজ্যে এত বড়ো বিষম দশচন্তার কারণ ইতিপবে আর-কখনো ঘটে নাই । কিন্তু ক্ষুধাকাতর বিদেশী বন্ধ তিনটির এ-সকল গরতব বিষয়ে তিলমাত্র চিন্তা নাই। তাহারা কোনো গতিকে আহার পাইলে বাঁচে। যখন দেখিল তাহাদের আহারাদি দিতে সকলে ইতস্তত করিতে লাগিল এবং বিধান খুজিবার জন্য টেক্কার বিরাট সভা আহবান করিল, তখন তাহাবা যে যেখানে যে খাদা পাইল খাইতে আরম্ভ করিয়া দিল । বাচবিচার কিছুই নাই।” দরি কহিল, “ভাই তিরি, বেশ দেখিতেছি ইতাব আমাদের অপেক্ষাও নীচজাতীয়।" আহারাদি করিয়া ঠাণ্ডা হইয়া তিন বন্ধ দেখিল এখনকার মানুষগলো কিছ: নতন রকমের। যেন জগতে ইহাদের কোথাও মলে নাই । যেন ইহাদের টিকি বিয়া কে উৎপাটন করিযা লইয়াছে ইহারা একপ্রকার হতবন্ধিভাবে সংসারের পশ পরিত্যাগ করিয়া দলিয়া দলিয়া বেড়াইতেছে। যাতা-কিছু করিতেছে তাত যেন আর. একজন কে তছে। ঠিক যেন পংেলাবাজির দোদলামান পতুলগুলির মতো। তাই কাহারও মুখে ভাব নাই, ভাবনা নাই, সকলেই নিরতিশয় গম্ভীল চালে যথানিয়মে চলাফেরা করিতেছে। অথচ সবসন্ধে ভারি অদ্ভত দেখাইতেছে । চারি দিকে এই জীবন্ত নিজীবতার পরমগভীর রকম-সকম নেপিয়া রাক্তপত্র আকাশে মাখ তুলিয়া হা-হা করিয়া হাসিয়া উঠিল। এই তান্তবিক কৌতুকের উচ্চ হাসাধনি তাসরাজ্যের কলরবতীন রাজপথে ভাবি বিচিত্র শনাইল । এখানে সকলই এমনি একান্ত যথাযথ, এমনি পরিপাটি, এমনি প্রাচীন, এমনি সংগম্ভীর যে, কৌতুক আপনার অকস্মাৎ-উচ্ছসিত উচ্ছsথল শব্দে আপনি চকিত হইয়া, লান হইয়া,