পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্ষধিত পাষাণ එ?6. খাটো কোতা এবং সাহেবি হ্যাট পরা একেবারে ছাড়িরা দিয়াছি। আবার সেইদিন অধরাত্রে বিছানার মধ্যে উঠিয়া বসিয়া শুনিতে পাইলাম, কে যেন গমরিয়া গমরিয়া বকে ফাটিয়া ফাটিয়া কাঁদিতেছে— যেন আমার খাটের নীচে, মেঝের নীচে এই ব্যহং প্রাসাদের পাষাণভিত্তির তলবতী একটা আদ্র অন্ধকার গোরের ভিতর হইতে কাঁদিয়া কদিয়া বলিতেছে, তুমি আমাকে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাও— কঠিন মায়া, গভীর নিদ্রা, নিম্ফল স্বপ্নের সমস্ত বার ভাঙিয়া ফেলিয়া তুমি আমাকে ঘোড়ায় তুলিয়া তোমার বকের কাছে চাপিয়া ধরিয়া, বনের ভিতর দিয়া, পাহাড়ের উপর দিয়া, নদী পার হইয়া তোমাদের সন্যালোকিত ঘরের মধ্যে আমাকে লইয়া যাও । আমাকে উদ্ধার করো।" আমি কে ! আমি কেমন করিয়া উদ্ধার করিব ! আমি এই ঘণমান পরিবর্তমান সবগুনপ্রবাহের মধ্য হইতে কোন মন্জমানা কামনাসন্দেরীকে তীরে টানিয়া তুলিব ! তুমি কবে ছিলে, কোথায় ছিলে, হে দিব্যরুপিণী : তুমি কোন শীতল উৎসের তীরে খজরেকুঞ্জের ছায়ায় কোন গ্যহহীন মরবেসিনীর কোলে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলে । তোমাকে কোন বেদয়ীন দস্য বনলতা হইতে পােপকোরকের মতো, মাতৃক্রোড় হইতে ছিন্ন করিয়া বিদ্যুৎগামী অশ্বের উপরে চড়াইয়া জলন্ত বালকেরাশি পার হইয়া কেন রাজপুরীর দাসাঁহাটে বিরুয়ের জন্য লইয়া গিয়াছিল। সেখানে কোন বাদশাহের ভূত্য তোমার নববিকশিত সলন্জক্যতর যৌবনশোভা নিরীক্ষণ করিয়া বণমড়া গণিয়া দিয়া, সমড় পার হইয়া, তোমাকে সোনার শিবিকায় বসাইয়া, প্রভুগহের অন্তঃপরে উপহার দিয়াছিল। সেখানে সে কী ইতিহাস । সেই সারঙ্গীর সংগীত, নাপারের নিক্কণ এবং সিরাজের সবেণীমদিরাব মধ্যে মধ্যে ছুরির ঝলক, বিষের জালা, কটাক্ষের আঘাত । BB Bu BBB BB BBB BBBBS BSB BB BB BB BBBB BBBB BBBDD BBBB BBB BBBBBS BBBB BBB BB BBBB BB BBBBBB পাদনকার কাছে লটাইতেছে ; বাহিরের বারের কাছে যমদ্যতের মতো হাবশি দেবদাতের মতো সাজ করিয়া, খোল তলোয়ার হাতে দাঁড়াইয়া। তাহার পরে সেই রক্তকলাষিত ঈষাফেনিল ষড়যন্তসংকুল ভীষণোঞ্জল ঐশবষ প্রবাহে ভাসমান হইয়া, তুমি মরুভূমির পাপমঞ্জরী কোন নিঠর মতুর মধ্যে অবতীর্ণ অথবা কোন নিঠরতর মহিমাতটে উংক্ষিপত হইয়াছিলে । এমন সময় হঠাৎ সেই পাগলা মেহের আলি চীৎকার করিয়া উঠিল “ তফাত ষাও, তফাত যাও । সব ঝ:ট হ্যায়, সব ঝ:ট হ্যায়।” চাহিয়া দেখিলাম, সকাল হইয়াছে : চাপরাশি ডাকের চিঠিপত্র লইয়া আমার হাত দিল এবং পাচক আসিয়া সেলাম করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আজ কিরুপ খানা প্রস্তুত করিতে হইবে। আমি কহিলাম, না, আর এ বাড়িতে থাকা হয় না । সেইদিনই আমার জিনিসপত্র তুলিয়া আপিসঘরে গিয়া উঠিলাম। আপিসের বন্ধ কেরানি করিম খাঁ আমাকে দেখিয়া ঈষৎ হাসিল । আমি তাহার হাসিতে বিরক্ত হইয়া কোনো উত্তর না করিয়া কাজ করিতে লাগিলাম । যত বিকাল হইয়া আসিতে লাগিল ততই অন্যমনস্ক হইতে লাগিলাম—মনে হইতে লাগিল, এখনই কোথায় যাইবার আছে– তুলার হিসাব পরীক্ষার কাজটা নিতান্ত অনাবশ্যক মনে হইল, নিজামের নিজামতও আমার কাছে বেশি-কিছু বোধ হইল না—