পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্ষধিত পাষাণ ૦૨૧ এখন পাগল হইয়া বাহির হইয়াও এই পাষাণ-রাক্ষসের মোহে আকৃষ্ট হইয়া প্রত্যহ প্রত্যুষে প্রদক্ষিণ করিতে আসে। আমি তৎক্ষণাৎ সেই বটিতে পাগলের নিকট ছটিয়া গিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, "মেহের আলি, ক্যা ঝ:ট হ্যায় রে?” সে আমার কথায় কোনো উত্তর না করিয়া আমাকে ঠেলিয়া ফেলিয়া অজগরের কবলের চতুদিকে ঘণমান মোহাবিদ্ট পক্ষীর ন্যায় চীৎকার করিতে করিতে বাড়ির চারি দিকে ঘুরিতে লাগিল। কেবল প্রাণপণে নিজেকে সতক করিবার জন্য বারবার বলিতে লাগিল, “তফাত যাও, তফাত যাও, সব ঝ:ট হ্যায়, সব কট হ্যায়।” আমি সেই জলঝড়ের মধ্যে পাগলের মতো আপিসে গিয়া করিম খাঁকে ডাকিয়া বলিলাম, "ইহার অর্থ কী আমায় খলিয়া বলো।” বন্ধ যাহা কহিল তাহার মমাথ এই ; এক-সময় ওই প্রাসাদে অনেক অতৃপ্ত বাসনা, অনেক উন্মত্ত সম্বেভাগের শিখা আলোড়িত হইত— সেই-সকল চিত্তদাহে, সেইসকল নিম্ফল কামনার অভিশাপে এই প্রাসাদের প্রত্যেক প্রস্তরখণ্ড ক্ষুধাতা তৃষাত হইয়া আছে, সজীব মানুষ পাইলে তাহাকে লালায়িত পিশাচীর মতো খাইয়া ফেলিতে চায় । যাহারা ত্রিরান্তি ওই প্রাসাদে বাস করিয়াছে, তাহাদের মধ্যে কেবল মেহের আলি পাগল হইয়া বাহির হইয়া আসিয়াছে, এ পর্যন্ত আর কেহ তাহার গ্রাস এড়াইতে পারে নাই । আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “আমার উদ্ধারের কি কোনে পথ নাই ।” বদ্ধ কহিল, “একটিমাত্র উপায় আছে, তাহা অত্যন্ত দরহে । তাহা তোমাকে বলিতেfছ- কিন্তু তৎপরে ওই গলেবাগের একটি ইরানী ক্রীতদাসীর পরাতন ইতিহাস বলা আবশ্যক। তেমন আশ্চর্য এবং তেমন হৃদয়বিদারক ঘটনা সংসারে আর কখনও ঘটে নাই ।” এমন সময় কৃলিরা আসিয়া খবর দিল, গাড়ি আসিতেছে । এত শীঘ্ৰ চ তাড়াতাড়ি বিছানাপত্ৰ বধিতে বাঁধতে গাড়ি আসিয়া পড়িল। সে গাড়ির ফারস্ট ক্লাসে একজন সত্যেথিত ইংরাজ জানলা হইতে মুখ বাড়াইয়া স্টেশনের নাম পড়িবার চেষ্টা করিতেছিল, আমাদের সহযাত্রী বন্ধটিকে দেখিয়াই হ্যালো বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল এবং নিজের গাড়িতে তুলিয়া লইল । আমরা সেকেণ্ড ক্লাসে উঠিলাম। বাবটি কে খবর পাইলাম না, গল্পেরও শেষ শোনা হইল না। আমি বলিলাম, লোকটা আমাদিগকে বোকার মতো দেখিয়া কৌতুক করিবা ঠকাইয়া গৈল ; গল্পটা আগাগোড়া বানানো। এই তকের উপলক্ষো আমার থিয়সফিস্ট আত্মীয়টির সহিত আমার জন্মের মতো বিচ্ছেদ ঘটিয়া গেছে । শ্রাবণ ১৩o২