পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"Ο & Ο গল্পগুচ্ছ যদি তিনি বলিতেন, লাউয়েলের সহিত নবীন প্রবন্ধলেখকের মতের এমনকি ভাষারও আশ্চৰ্য অবিকল ঐক্য দেখা যাইতেছে, তাহা হইলে তাঁহার কথাটা সত্যও হইত অথচ অপ্রিয়ও হইত না। এই ঘটনার পর, সহপাঠীমহলে আমার প্রতি যে অখণ্ড বিশ্বাস ছিল তাহাতে একটি বিদারণরেখা পড়িল। কেবল আমার চিরানরক্ত ভক্তাগ্রগণ্য অমলোচরণের হৃদয়ে লেশমাত্র বিকার জন্মিল না। সে আমাকে বারবার বলিতে লাগিল, “তোমার বিদ্যাপতি নাটকখানা ব্রহমদৈত্যকে শনাইয়া দাও, দেখি সে সম্বন্ধে নিন্দক কী বলিতে পারে।” রাজা শিবসিংহের মহিষী লছিমাদেবীকে কবি বিদ্যাপতি ভালোবাসিতেন এবং তাঁহাকে না দেখিলে তিনি কবিতা রচনা করিতে পারিতেন না। এই মম অবলম্ববন করিয়া আমি একখানি পরম শোকাবহ উচ্চশ্রেণীর পদ্যনাটক রচনা করিয়াছিলাম ; আমার শ্রোতৃবগের মধ্যে যাহারা পরাতত্ত্বের মর্যাদা লঙ্ঘন করিতে চাহেন না তাঁহারা বলিতেন, ইতিহাসে এরাপ ঘটনা ঘটে নাই। আমি বলিতাম, সে ইতিহাসের দভোগা ! ঘটিলে ইতিহাস ঢের বেশি সরস ও সত্য হইত। নাটকখানি যে উচ্চশ্রেণীর সে কথা আমি পবেই বলিয়াছি। অমলা বলিত সবোচ্চশ্রেণীর। আমি আপনাকে যতটা মনে করিতাম, সে আবার আমাকে তাহার চেয়েও বেশি মনে করিত। অতএব আমার যে কী-এক বিরাট রুপ তাহার চিত্তে প্রতিফলিত ছিল, আমিও তাহার ইয়ত্তা করিতে পারিতাম না । নাটকখানি বামাচরণবাবকে শনাইয়া দিবার পরামশ আমার কাছে মন্দ লাগিল না; কারণ, সে নাটকে নিন্দ্যযোগ্য ছিদ্র লেশমাত্র ছিল না এইরুপ আমার সদঢ় বিশ্বাস । অতএব আর-একদিন তকসভার বিশেষ অধিবেশন আহত হইল, ছাত্রবন্দের সমক্ষে আমি আমার নাটকখানি পাঠ করিলাম এবং বামাচরণবাব তাহার সমালোচনা করিলেন। সে সমালোচনাটি বিস্তারিত আকারে লিপিবদ্ধ করিবার প্রবত্তি আমার নাই । সংক্ষেপত, সমালোচনাটি আমার অনকেল হয় নাই; বামাচরণবাবর মতে নাটকগত পারগণের চরিত্র ও মনোভাব -সকল নিদিষ্ট বিশেষত্ব প্রাপ্ত হয় নাই। বড়ো বড়ো সাধারণ ভাবের কথা আছে, কিন্তু তাহা বাপবৎ অনিশ্চিত, লেখকের অন্তরের মধ্যে আকার ও জীবন প্রাপ্ত হইয়া তাহা সজিত হইয়া উঠে নাই । বশিচকের পচ্ছদেশেই হলে থাকে, বামাচরণবাবরে সমালোচনার উপসংহারেই তীব্রতম বিষ সঞ্চিত ছিল। আসন গ্রহণ করিবার প্বে তিনি বলিলেন, আমার এই নাটকের অনেকগুলি দশ্য এবং মলভাবটি গেটে-রচিত টাসো নাটকের অনুকরণ, এমনকি অনেকস্থলে অনুবাদ । এ কথার সদত্তের ছিল। আমি বলিতে পারিতাম, হউক অনুকরণ, কিন্তু সেটা নিন্দার বিষয় নহে! সাহিত্যরাজ্যে চুরিবিদ্যা বড়ো বিদ্যা—এমনকি, ধরা পড়িলেও । সাহিত্যের বড়ো বড়ো মহাজনগণ এই কাজ করিয়া আসিয়াছেন, এমনকি, সেক্সপিয়রও বাদ যান না। সাহিত্যে যাহার ওরিজিনালিটি অত্যন্ত অধিক সেই চুরি করিতে সাহস করে, কারণ, সে পরের জিনিসকে সম্পণে আপনার করিতে পারে। ভালো ভালো এইরুপ আরও অনেক কথা ছিল, কিন্তু সেদিন বলা হয় নাই। বিনয় তাহার কারণ নহে। আসল কথা, সেদিন একটি কথাও মনে পড়ে নাই। প্রায়