পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ꮼ8 গল্পগুচ্ছ আত্মীয়স্বজনের চক্ষে তাহার প্রতিষ্ঠাস্থান অনেকটা উপরে উঠিয়া গেছে। মন্দাকিনী এতদিন তাহাকে বিশেষ একটা-কেহ বলিয়া মনে করে নাই। অমল ও চারীর হাস্যালাপ-আলোচনাকে সে ছেলেমানষি বলিয়া উপেক্ষা করিয়া পান সাজিত ও ঘরের কাজক, করিত; নিজেকে সে উহাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সংসারের পক্ষে আবশ্যক বলিয়াই জানিত। অমলের পান খাওয়া অপরিমিত ছিল। মন্দার উপর পান সাজিবার ভার থাকতে সে পানের অষথা অপব্যয়ে বিরক্ত হইত। অমলে চারতে ষড়যন্ত্র করিয়া মন্দার পানের ভাণ্ডার প্রায়ই লঠ করিয়া আনা তাহদের একটা আমোদের মধ্যে ছিল। কিন্তু এই শৌখিন চোরদটির চৌষপরিহাস মন্দার কাছে আমোদজনক বোধ হইত না। আসল কথা, একজন আশ্রিত অন্য আশ্রিতকে প্রসন্নচক্ষে দেখে না। অমলের জন্য মন্দাকে যেটুকু গহকম অতিরিক্ত করিতে হইত সেটুকুতে সে যেন কিছু অপমান বোধ করিত। চার অমলের পক্ষপাতী ছিল বলিয়া মুখ ফুটিয়া কিছু বলিতে পারিত না, কিন্তু অমলকে অবহেলা করিবার চেষ্টা তাহার সবাদাই ছিল । সুযোগ পাইলেই দাসদাসীদের কাছেও গোপনে অমলের নামে খোঁচা দিতে সে ছাড়িত না । তাহারাও यात्रा मिऊ । কিন্তু অমলের যখন অভু্যত্থান আরম্ভ হইল তখন মন্দার একট চমক লাগিল । সে অমল এখন আর নাই। এখন তাহার সংকুচিত নমতা একেবারে ঘুচিয়া গেছে, অপরকে অবজ্ঞা করিবার অধিকার এখন যেন তাহারই হাতে । সংসারে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হইয়া যে পর্ষ অসংশয়ে অকুঠিতভাবে নিজেকে প্রচার করিতে পারে, যে লোক একটা নিশ্চিত অধিকার লাভ করিয়াছে, সেই সমথ পরিষে সহজেই নারীর দস্টি আকষণ করিতে পারে। মন্দা যখন দেখিল অমল চারি দিক হইতেই শ্রদ্ধা পাইতেছে তখন সেও অমলের উচ্চ মস্তকের দিকে মুখ তুলিয়া চাহিল। অমলের তরুণ মুখে নবগৌরবের গবোলজম্বল দীপিত মন্দার চক্ষে মোহ আনিল; সে যেন অমলকে নতন করিয়া দেখিল। এখন আর পান চুরি করিবার প্রয়োজন রহিল না। অমলের খ্যাতিলাভে চারর এই আর-একটা লোকসান; তাহাদের ষড়যন্ত্রের কৌতুকবন্ধনটুকু বিচ্ছিন্ন হইয়া গেল; পান এখন অমলের কাছে আপনি আসিয়া পড়ে, কোনে অভাব হয় না। তাহা ছাড়া, তাহাদের দইজনে-গঠিত দল হইতে মন্দাকিনীকে নানা কৌশলে দাবে রাখিয়া তাহারা যে আমোদ বোধ করিত তাহাও নষ্ট হইবার উপক্রম হইয়াছে। মন্দাকে তফাতে রাখা কঠিন হইল। অমল যে মনে করিবে চারই তাহার একমাত্র বন্ধ ও সমজদার, ইহা মন্দার ভালো লাগিত না। পবোঁকুত অবহেলা সে সদে আসলে শোধ দিতে উদ্যত। সুতরাং অমলে চারতে মুখোমুখি হইলেই মন্দা কোনো ছলে মাঝখানে আসিয়া ছায়া ফেলিয়া গ্রহণ লাগাইয়া দিত। হঠাৎ মন্দার এই পরিবতন লইয়া চার তাহার অসাক্ষাতে যে পরিহাস করিবে সে অবসরটকে পাওয়া লন্ত হইল। মন্দার এই অনাহত প্রবেশ চারার কাছে যত বিরক্তিকর বোধ হইত অমলের কাছে ততটা বোধ হয় নাই, এ কথা বলা বাহুল্য। বিমুখ রমণীর মন ক্রমশ তাহার দিকে যে ফিরিতেছে, ইহাতে ভিতরে-ভিতরে সে একটা আগ্রহ অনুভব করিতেছিল। কিন্তু চার যখন দর হইতে মন্দাকে দেখিয়া তাঁর মদ বরে বলিত, “ঐ আসছেন" তখন অমলও বলিত, “তাই তো, জালালে দেখছি।" পথিবীর অন্য-সকল সঙ্গের প্রতি