পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮻ: *8 গল্পগুচ্ছ নলিনী। (পনেরায় আসিয়া) কী সতীশ, এখনো যে তোমার মনের খেদ মিটল না। টেনিস কোতার শোকে তোমার হদয়টা যে বিদীণ হয়ে গেল। হায়, কোতাহারা হৃদয়ের সান্ত্বনা জগতে কোথায় আছে— দরজির বাড়ি ছাড়া। সতীশ । আমার হদয়টার খবর যদি রাখতে তবে এমন কথা আর বলতে না, নেলি । নলিনী । (করতালি দিয়া) বাহবা। মিস্টার নন্দীর দৃষ্টাতে মিষ্ট কথার আমদানি এখনই শরে হয়েছে। প্রশ্রয় পেলে অত্যন্ত উন্নতি হবে ভরসা হচ্ছে। এসো, একটা কেক খেয়ে যাবে, মিষ্ট কথার পরস্কার মিস্টান্ন। সতীশ । না, আজ আর খাব না, আমার শরীরটা— নলিনী। সতীশ, আমার কথা শোনো—টেনিস কোতার খেদে শরীর নস্ট কোরো না, খাওয়াদাওয়া একেবারে ছাড়া ভালো নয়। কোতা জিনিসটা জগতের মধ্যে সেরা জিনিস সন্দেহ নেই, কিন্তু এই তুচ্ছ শরীরটা না হলে সেটা ঝুলিয়ে বেড়াবার সুবিধা হয় না । সপ্তম পরিচ্ছেদ শশধর। দেখো মন্মথ, সতীশের উপরে তুমি বড়ো কড়া ব্যবহার আবক্ষভ কবেছ . এখন বয়েস হয়েছে, এখন ওর প্রতি অতটা শাসন ভালো নয় । বিধ। বলো তো, রায়মশায়। আমি তো ওঁকে কিছুতেই বুঝিয়ে পারলেম না। মন্মথ। দুটো অপবাদ এক মহেতেই! একজন বললেন নিদয়, আর-একজন বললেন নিবোধ। যাঁর কাছে হতবুদ্ধি হয়ে আছি তিনি যা বলেন সহ্য করতে রাজি আছি—তাঁর ভগ্নী যা বলবেন তার উপরেও কথা কব না, কিন্তু তাই বলে তাঁর ভগ্নীপতি পৰ্যন্ত সহিষ্ণতা চলবে না। আমার ব্যবহারটা কী রকম কড়া শুনি । শশধর । বেচারা সতীশের একট কাপড়ের শখ আছে, ও পাঁচ জায়গায় মিশতে আরম্ভ করেছে, ওকে তুমি চাঁদনির— মন্মথ। আমি তো চাঁদনির কাপড় পরতে বলি নে। ফিরিঙ্গি পোশাক আমার দ্য চক্ষের বিষ। ধ্বতি-চাদর চাপকান-চোগা পর্যক, কখনো লক্ষজা পেতে হবে না। শশধর। দেখো মন্মথ, সতীশ যদি এ-বয়সে শখ মিটিয়ে না নিতে পারে তবে বড়োবয়সে খামকা কী করে বসবে, সে আরও বদ দেখতে হবে। আর ভেবে দেখো, যেটাকে আমরা শিশুকাল হতেই সভ্যতা বলে শিখছি তার আক্ৰমণ ঠেকাবে কী করে। মন্মথ। যিনি সভ্য হবেন তিনি সভ্যতার মালমসলা নিজের খরচেই জোগাবেন। যে-দিক হতে তোমার সভ্যতা আসছে টাকাটা সেদিক হতে আসছে না, বরং এখান হতে সেই দিকেই যাচ্ছে। বিধা। রায়মশায়, পেরে উঠবেন না— দেশের কথা উঠে পড়লে ওঁকে থামানো বায় না । শশধর। ভাই মন্মথ, ও-সব কথা আমিও বাকি। কিন্তু, ছেলেদের আবদারও তো এড়াতে পারি নে। সতীশ ভাদুড়িসাহেবদের সঙ্গে যখন মেশামেশি করছে তখন উপযন্ত কাপড় না থাকলে ও-বেচারার বড়ো মশকিল। আমি র্যাঙ্কিনের বাড়িতে