পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাস্টারমশায় ᏩᎸᎼ পৰ্যন্ত। আর-কখনও ডাকিব না। একদিন পাঁচ টাকা মাইনের মাস্টারি করিয়াছিলাম বটে-– কিন্তু, আমি সামান্য হরলাল মাত্র। ly একদিন সন্ধ্যার পর হরলাল আপিস হইতে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, তাহার একতলার ঘরে অন্ধকারে কে একজন বসিয়া আছে। সেখানে যে কোনো লোক আছে তাহা লক্ষ্য না করিয়াই সে বোধ হয় উপরে উঠিয়া যাইত, কিন্তু দরজায় ঢাকিয়াই দেখিল এসেন্সের গন্ধে আকাশ পণ । ঘরে প্রবেশ করিয়া হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “কে, মশায় ।” বেণ বলিযা উঠিল, “মাস্টারমশায়, আমি।” হরলাল কহিল, “এ কী ব্যাপার। কখন আসিয়াছ ।” বেণ কহিল, "অনেকক্ষণ আসিয়াছি। আপনি যে এত দেরি করিয়া আপিস হইতে ফেরেন, তাহা তো আমি জানিতাম না।” বহুকাল হইল সেই-যে নিমন্ত্রণ খাইয়া গেছে তাহার পরে আর একবারও বেশ এ বাসায় আসে নাই । বলা নাই, কহা নাই, আজ হঠাৎ এমন করিয়া সে যে সন্ধার সময় এই অন্ধকার ঘরের মধ্যে অপেক্ষা করিয়া বসিয়া আছে ইহাতে হরলালের মন উদবিগ্ন হইয়া উঠিল। উপরের ঘরে গিয়া বাতি জম্বালিয়া দুইজনে বসিল । হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “সব ভালো তো ? কিছু বিশেষ খবর আছে ?” বেণ কহিল, পড়াশনা ক্ৰমে তাহর পক্ষে বড়োই একঘেয়ে হইয়া আসিয়াছে। কহিতক সে বৎসরের পর বৎসর ওই সেকেন্ড ইয়ারেই আটকা পড়িয়া থাকে! তাহার চেয়ে অনেক বয়স ছোটো ছেলের সঙ্গে তাহাকে একসঙ্গে পড়িতে হয়, তাহার বড়ো লঙ্কজা করে। কিন্তু বাবা কিছুতেই বোঝেন না। হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার কী ইচ্ছা ।” বেণ কহিল, তাহার ইচ্ছা সে বিলাত যায়, বারিস্টার হইয়া আসে। তাহারই সঙ্গে একসঙ্গে পড়িত, এমন-কি, তাহার চেয়ে পড়াশনায় অনেক কাঁচা, একটি ছেলে বিলাতে যাইবে সিস্থর হইয়া গেছে । হরলাল কহিল, "তোমার বাবাকে তোমার ইচ্ছা জানাইয়াছ ?” বেণ কহিল, “জানাইয়াছি। বাবা বলেন, পাস না করিলে বিলাতে যাইবার প্রস্তাব তিনি কানে আনিবেন না। কিন্তু আমার মন খারাপ হইয়া গেছে— এখানে থাকিলে আমি কিছুতেই পাস করিতে পারিব না।” হরলাল চুপ করিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল। বেণ কহিল, “আজ এই কথা লইয়া বাব। আমাকে যাহা মুখে আসিয়াছে তাহাই বলিয়াছেন। তাই আমি বাড়ি ছাড়িয়া ঢলিয়া আসিয়াছি। মা থাকিলে এমন কখনোই হইতে পারিত না।” বলিতে বলিতে সে অভিমানে কাঁদিতে লাগিল। হরলাল কহিল, "চলো আমি-সন্ধ তোমার বাবার কাছে যাই, পরামর্শ করিয়া যাহা ভালো হয় সিথর করা যাইবে।” বেণ কহিল, “না, আমি সেখানে যাইব না।”