পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বড়বাবুর বড়দিন বড়দিনের ছুটিতে বড়বাবু যে কেন থিয়েটার দেখতে যান, যে কাজ তিনি ইতিপূর্বে এবং অতঃপর কখনও করেননি, সেই একদিনের জন্য সে কাজ তিনি যে কেন করেন, তার ভিতর অবশ্য একটু রহস্য আছে। তিনি যে আমোদপ্রিয় নন, এ সত্য এতই স্পষ্ট যে, তার শত্রুরাও তা মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করত। তিনি বাঁধাবাঁধি নিয়মের অতিশয় ভক্ত ছিলেন, এবং নিজের জীবনকে বাঁধা নিয়মের সম্পূর্ণ অধীন করে নিয়ে এসেছিলেন । পোনের বৎসরের মধ্যে তিনি একদিনও আপিস কামাই করেননি, একদিনও ছুটি নেননি, এবং প্রতিদিন দশটা পাঁচটা ঘাড় গুজে একমনে খাতা লিখে এসেছেন। আপিসের বড়সাহেব। Mr. Schleiermacher বলতেন, “ ’ফবানী’ মানুষ নয়—কলের মানুষ ; ও দেহে বাঙালী হলেও, মনে খাঁটি জার্মান।” বলা বাহুল্য যে, ‘ফবানী’ হচ্ছে ভবানীরই জার্মান সংস্করণ। এই গুণেই, এই যন্ত্রের মত নিয়মে চলার দরুণই, তিনি অল্প বয়সে আপিসের বড়বাবু হয়ে ওঠেন। সে সময়ে তীর বয়স পয়ত্ৰিশের বেশি ছিল না, যদিচ দেখতে মনে হত যে, তিনি পঞ্চাশ পেরিয়েছেন। চােখের এরকম ভুল হবার কারণ এই যে, অপৰ্যাপ্ত এবং অতিপ্রবৃদ্ধ দাড়িগোঁফে তীর মুখে বয়সের অঙ্ক সব চাপা পড়ে গিয়েছিল। বড়বাবু যে সকল প্রকার সখ সাধ আমোদ আহলাদের প্রতি শুধু বীতরাগ নয়, বীতশ্রদ্ধও ছিলেন, তার কারণ আমোদ জিনিসটে কোনরূপ নিয়মের ভিতর পড়ে না। বরং ও-বস্তুর ধর্মই হচ্ছে, সকলপ্রকারের নিয়ম ভঙ্গ করা। “রূটীন” করে আমোদ করা যে কাজ করারই সামিল, এ কথা সকলেই মানতে বাধ্য। উৎসব ব্যাপারটি অবশ্য নিত্যকর্মের মধ্যে নয়, এবং যে কর্ম নিত্যকর্ম নয় এবং হতে পারে মা, তাকে বড়বাবু ভালবাসতেন না,-ভয় করতেন। তঁর বিশ্বাস ছিল যে, সুচারুরূপে জীবনযাত্ৰা নিৰ্বাহ করবার একমাত্র উপায় হচ্ছে জীবনটাকে দৈনন্দিন করে তোলা ; অর্থাৎ সেই