পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sy 8 গল্পসংগ্ৰহ বেঁকে মেরে ঝিকে শেখান। এর ফলে পটেশ্বরীর মনে, থিয়েটার সম্বন্ধে এমনি একটি বিশ্ৰী ধারণা জন্মেছিল যে, তার বৌদিদিদের হাজার পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও, সে কখনও কোন থিয়েটারের চৌকাঠ ডিঙ্গয়নি। অন্তত সে ত তার স্বামীকে তাই বুঝিয়েছিল। বড়বাবু তঁর স্ত্রীর এ কথা বিশ্বাস করতেন, কেননা তা না করলে তিনি জানতেন যে, তীর মুখের ভাত গলা দিয়ে নামবে না, রাত্তিরে চোখের পাতা পড়বে নু, আপিসের খাতায় ঠিক নামাতে ভুল হবে, -এক কথায় তীর বেঁচে আর কোনও সুখ থাকবে না । এর পর তিনি নিজে যদি সেই পাপ থিয়েটার দেখতে যান, তাহলে তঁর স্ত্রী কি আর তঁকে ভক্তি করবে ? বলা বাহুল্য, তার স্ত্রীর স্বামীভক্তির উপরে তিনি তঁর জীবনের সকল আশা, সকল ভরসা প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছিলেন। একদিকে স্বচক্ষে সংস্কারকদের লাঞ্ছনা দেখবার অদম্য কৌতুহল, অপরদিকে স্ত্রীর ভক্তি হারাবার ভয়-এই দুটি মনোভাবের মধ্যে তিনি এতদূর দোলাচলচিত্তবৃত্তি হয়ে পড়েছিলেন যে, সমস্ত দিনের মধ্যে র্তার আর মনস্থির করা হল না। এক্ষেত্রে প্রবৃত্তি আর নিবৃত্তি উভয়েরই বল সমান ছিল বলে, এর একটি অপরটিকে পরাস্ত করতে পারছিল না। অতঃপর সূৰ্য যখন অস্ত গেল, তখন “সংস্কারের কেলেঙ্কার” এর অভিনয় দেখাটা যে তঁর পক্ষে একান্ত কর্তব্য, এই ধারণাটি হঠাৎ তঁর মনে বদ্ধমূল হয়ে গেল! একা বাড়ীতে দিনটা বড়বাবু কোন প্রকারে কাটালেও, ও অবস্থায় সন্ধোটা কাটান তীর পক্ষে বড়ই কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। সেই গোধূলিলগ্নে পটেশ্বরী সম্বন্ধে যতরকম দুশ্চিন্তা, সংশয়, ভয় ইত্যাদি চামচিকে বাদুড়ের মত এসে তাঁর সমস্ত মনটাকে অধিকার করে বসত। তিনি দুদিন এ উপদ্রব সহ্য করেছিলেন, তৃতীয় দিন সহ্য করবার মত ধৈর্য ও বীর্য বড়বাবুর দেহে থাকলেও, মনে ছিল না। তিনি স্থির করলেন থিয়েটারে যাবেন, এবং সে কথা পটেশ্বরীর কাছে চেপে যাবেন । তিনি না বললে পটেশ্বরী কি করে জানবে যে তিনি থিয়েটারে গিয়েছিলেন, সে ত আর ও সব জায়গায় যায় না ? এক ধরা পড়ারবার ভয় ছিল তঁর শ্যালাজদের কাছে। যদি