পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসংগ্ৰহ এই জীবনের পরীক্ষা তিনি কি ভাবে দিয়েছিলেন, এবং তার ফলাফল কি হয়েছিল, সেই কথাটাই হচ্ছে। এ গল্পের মোদা কথা। ( ७ ) শ্যামলাল আর বিবাহ করেননি। তার কারণ, প্রথমত, তাঁর এ বিষয়ে প্ৰবৃত্তি ছিল না, দ্বিতীয়ত তিনি তা আকর্তব্য মনে করতেন। তারপর তার মেয়েটির মুখের দিকে তাকালে, আবার নতুন এক স্ত্রীর কথা মনে হলে তিনি আঁৎকে উঠতেন। তঁর মনে হত, ঐ মেয়েটিতে তঁর স্ত্রী তার শরীরমনের একটি জীবন্ত স্মরণচিহ্ন রেখে গিয়েছে। কোনও কাজ হাতে নিয়ে তা আধা-খেচড়া ভাবে করা শ্যামলালের প্রকৃতিবিরুদ্ধ, সুতরাং এই সন্তান-লালনপালনের কাজ তিনি তঁর সকল মন, সকল প্ৰাণ দিয়ে করেছিলেন। শ্যামলাল যেমন তঁর সকল মন একটি জিনিসের উপর বসাতে পারতেন, তেমনি তিনি তঁর সকল হৃদয় দুটি একটি লোকের উপরও বসাতে পারতেন। এ ক্ষেত্রে তার সকল হৃদয় তঁর ছেলে-মেয়ে অধিকার করে বসেছিল, সুতরাং তঁর হৃদয়বৃত্তির একটি পয়সাও বাজে খরচে নষ্ট হয়নি। ফলে, তঁর ছেলে ও মেয়ে শরীরে ও মনে অসাধারণ সুস্থ ও বুলিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কেননা এ কাজে শ্যামলালের ভালবাসা তার কর্তব্য বুদ্ধির প্রবল সহায় श:छिन् । র্তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি চৌকির হাত থেকে উদ্ধার পেয়ে, বছর দশেক মহকুমায়। মহকুমায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু সে সব দুৰ্গম স্থানে-পটুয়াখালি, দক্ষিণ শাহাবাজপুর, কক্সবাজার, জেহানাবাদ প্রভৃতিই ছিল তঁর কর্মস্থল। আজ এখানে, কাল ওখানে -এই কারণে তিনি তঁর ছেলেকে স্কুলে দিতে পারেননি, ঘরে রেখে নিজেই পড়িয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, বিদ্যাবুদ্ধিতে র্তার সঙ্গে ও সব জায়গার । কোন স্কুল-মাস্টারের তুলনাই হতে পারে না। ফলে বীরেন্দ্রলাল যখন ১৫ বৎসর বয়সে প্রাইভেট স্টুডেন্ট হিসেবে ম্যাট্রিকুলেশান দিলে, তখন সে অক্লেশে ফাস্ট ডিভিসনে পাস করলে ।