পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 88 গল্পসংগ্ৰহ —“প্ৰশান্তর কথা যদি ঠিক হয়, তাহলে ছোট গল্প আমারই লেখা উচিত, কেননা আমার মুখে গল্প ছোট হতে বাধ্য। কেননা আমার বর্ণনা করবার শক্তি নেই, আর বক্তৃতা করবার প্রবৃত্তি নেই। এই ত গেল প্রথম কথা। তারপর জীবনটাকে আমি ট্রাজেডিও মনে করিনি, কমেডিও মনে করিনে ; কারণ আমার মতে সংসারটা হচ্ছে একসঙ্গে ও দুই-ই। ও দুই-ই হচ্ছে একই জিনিসের এ-পিঠ আর ও-পিঠ। এখন আমার নিজের জীবনের একটি ঘটনা বলতে যাচ্ছি। তোমরা দেখ প্ৰথমে তা ছোট হয়। কিনা, আর দ্বিতীয়ত তা গল্প হয়। কিনা। এইটুকু ভরসা আমি দিতে পারি যে, তা ছাপলে আট পেজের কম হবে না, ষোল পেজেরও বেশি হবে না-বার পেজের কাছ ঘেঁসেই থাকবে । তবে তা এক ‘সবুজ পত্র’ ছাড়া আর কোন কাগজ ছাপতে রাজি হবে কিনা বলতে পারিনে। কেননা তার গায়ে ভাষার কোনও পোষাক থাকবে না । ভাষা জিনিসটে যদি আমার ঠোঁটের গোড়ায় থাকত তাহলে আমি আঁকিও কষতুম না, গল্পও লিখাতুম না, ওকালতি করাতুম। আর তাহলে আমার টাকারও এত টানাটানি হত না । সে যা হোক, এখন গল্প শোন ।” প্রফেসরের কথা আমি যে বছর বি.এস.সি. পাশ করি, সেই বছর পূজোর ছুটিতে বাড়ী গিয়ে জ্বরে পড়ি । সে জ্বর আর দু’তিন মাসের মধ্যে গা থেকে বেমালুম ঝেড়ে ফেলতে পারলুম না। দেখলুম, চণ্ডীদাসের অন্তরের পীরিতি-বেয়াধির মত, আমার গায়ের জ্বর শুধু “থাকিয়া থাকিয়া জাগিয়া ওঠে, জ্বালার নাহিক ওর ।” শেষটায় স্থির করলুম, চেঞ্জে যাব। কোথায়, জান ?—উত্তর বঙ্গে ! ম্যালেরিয়ার পীঠস্থানে । এর কারণ তখন বাবা সেখানে ছিলেন, এবং ভাল হাওয়ার চাইতে ভাল খাওয়ার উপর আমার বেশি ভরসা ছিল। এ বিশ্বাস আমার পৈতৃক। বাবার জীবনের প্রধান সখা ছিল আহার। তিনি ওষুধে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু