পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছোটগল্প Σ’ ά Σ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছি-তখন সেই সুন্দরীর দিকে চেয়ে দেখি, সে মুখে হাসির রেখা পর্যন্ত নেই। যে চোখ এতিক্ষণ বিদ্যুতের মত চঞ্চল ছিল, সে চােখ এখন তারার মত স্থির হয়ে রয়েছে, আর তার ভিতরে কি একটা বিষাদ, একটা নৈরাশ্যের কালো ছায়া পড়েছে। সে দৃষ্টি যখন আমার চােখের উপর পড়ল, তখন আমার মনে হল তা যেন স্পষ্টাক্ষরে বললে, “আমি এ জীবনে তােমাকে আর ভুলতে পারব না ; আশা করি তুমিও আমাকে মনে রাখবে।” মানুষের চোখ যে কথা কয় এ কথা আমি আগে জানতুম না। অতঃপর আমি চােখ নীচু করে সেখান থেকে চলে এলুম। তারপর যা হল শোন। আমি এ বিয়েতে বাবার মত করা লুম। আমি তার একমাত্র ছেলে, তার উপর আবার ভাল ছেলে ; সুতরাং বাবা আমার ইচ্ছা পূর্ণ করতে দ্বিধা করলেন না। প্রস্তাবটা অবশ্য বরের পক্ষ থেকেই উত্থাপন করা হল। উভয়পক্ষের ভিতর মামুলি কথাবার্তা চলল। তারপর আমরা একদিন সেজোগুজে মেয়ে দেখতে গেলুম। মেয়ে আমি আগে দেখলেও বাবা ত দেখেননি। তা চাড়া রীতিরক্ষে বলেও ত একটা জিনিস আছে । দে সাহেবের বাড়ীতে আমরা উপস্থিত হবার পর, খানিকক্ষণ বাদেই একটি মেয়েকে সাজিয়ে গুজিয়ে আমাদের সুমুখে এনে হাজির করা হল। সে এসে দাঁড়াবামাত্র আমার, চােখে বিদ্যুতের আলো নয়, বুকে বিড়াতের ধাক্কা লাগল। এ সে নয়-অন্যটি। সাজগোজের ভিতর তার কদৰ্যত জোর করে ঠেলে বেরিয়েছিল। আমি যদি তার সেদিনকার মূর্তির বর্ণনা করি, তাহলে নিষ্ঠুর কথা বলব। তার কথা তাত থােক। আমি এ ধাক্কায় এতটা স্তম্ভিত হয়ে গেলুম যে, কাঠের পুতুলের মত অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম। পর্দার আড়াল থেকে পাশের ঘরে একটি মেয়ে বোধ হয় আমার ঐ অবস্থা দেখে, খিলখিল করে তেসে উঠল। আমার বুঝতে বাকী রইল না—সে হার্সি কার। আমি যদি কবি হাতুম, তাহলে সেই মুহূর্তে বলতুম, “ধরণী দ্বিধা হও, আমি তােমার মধ্যে প্ৰবেশ করি।”