পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল-লোহিতের স্বয়ম্বর 次a○ আবার একমনে দাঁতে মিশি দিচ্ছে। সকলেরই পরনে মিহি শান্তিপুর ধূতি, কোমরে গোট, বাজুতে দাওয়া আর দোয়া-ভরা কবচ ও মাদুলি, আর কঁধে লাল ডুরেন্দার গামচা। বেটারা যেন সব নবাবপুস্তুরকোন দিকে ভ্ৰক্ষেপ নেই। এরা পৃথিবীতে এসেছে যেন পান দেখিত৷ খেতে, আর কাজিয়ার সময় লোকের পেটে সড়কি বসিয়ে দিতে ; তার পরেই নিরুদেশ। বেটাদের বাড়ী হচ্ছে হয় নটীবাড়ী নয় শ্ৰীঘরআর যেখানেই তারা যায়, সেইখানেই ত এ দুই ঘরবাড়ী আছে। এই সৰ লাল-খাঁ কালো-খাঁদের বঁায়ে রেখে, আমরা নিজের আড়ায় গিয়ে ঢুকলুম। দিনটে কেটে গেল হাতিয়ার শানাতে। কারণ রাজবাড়ী থেকে যে সব ঢাল-তলওয়ার আমাদের দেওয়া হয়েছিল, সে সব দুশ’ বৎসরের মরচে-ধরা। তাদের মরচে ছাড়াতেই প্ৰায় দিন কাবার হয়ে গেল। সেদিন আমাদের আর রান্নাবাড়া হল না, যদিচ রাজবাড়ী থেকে প্ৰকাণ্ড সিধে এসেছিল। আমরা সকলে জলের ছিটে দিয়ে ছাতু তাল পাকিয়ে নিয়ে, গণ্ড গণ্ড কাঁচা লঙ্কা দিয়ে তা গলাধঃকরণ করলুম। সন্ধে হয় হয়, এমন সময় আমাদের ডাক পড়ল-স্বয়ম্বরসভা পাহারা দেবার জন্য। ভোজপুরিদের সঙ্গে লাঠিয়ালদের তফাৎ এই যে, লেঠেলরা খেতে না পেলে ডাকাত হয়, আর ভোজপুরিরা পাহারাগুয়ালা সভাপর্ব বিয়ের সভা বসেছিল। ঠাকুরবাড়ীতে, কারণ তার নাটমন্দিরে শ-পাঁচেক লোক হেলায় বসতে পারে। ঠাকুরবাড়ীতে ঢোকবার আগে বাইরের উঠানে দেখি লাঠিয়ালরা সব সার দিয়ে দাড়িয়ে আছে, এ এক নতুন মুর্তি। এবার তারা সব কাপড় পরেছে, উত্তরবঙ্গের চাষার মেয়েদের মত বুক থেকে ঝুলিয়ে, আর সে কাপড়ের স্কুল হাঁটু পর্যন্ত। সকলেরই ডান হাতে পাঁচ হাত লম্বা লাঠি, কারও কারও হাতে আবার পুটিমাছ-ধরা ছিপের মত সরু সরু লম্বা সড়কি, তার মুখে ইস্পাতের ফলাগুলো জিভের মত বেরিয়ে আছে। সে ত মানুষের জিভ নয়,