পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ক্ষুধিত পাষাণ।
১৬৭

লোক দেখিয়া প্রথমেই বরীচে তুলার মাশুল আদায়ে নিযুক্ত করিয়া দিল।

 বরীচ্‌ জায়গাটি বড় রমণীয়। নির্জ্জন পাহাড়ের নীচে বড় বড় বনের ভিতর দিয়া শুস্তা নদীটি (সংস্কৃত “স্বচ্ছতোয়া”র অপভ্রংশ) উপল-মুখরিত পথে নিপুণা নর্ত্তকীর মত পদে পদে বাঁকিয়া বাঁকিয়া দ্রুত নৃত্যে চলিয়া গিয়াছে। ঠিক সেই নদীর ধারেই পাথর-বাঁধানো দেড়শত সোপানময় অত্যুচ্চ ঘাটের উপরে একটি শ্বেত প্রস্তরের প্রাসাদ শৈলপদমূলে একাকী দাঁড়াইয়া আছে—নিকটে কোথাও লোকালয় নাই। বরীচের তুলার হাট এবং গ্রাম এখান হইতে দূরে।

 প্রায় আড়াই শত বৎসর পূর্ব্বে দ্বিতীয় শা মামুদ্‌ ভোগবিলাসের জন্য প্রাসাদটি এই নির্জ্জনস্থানে নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। তখন ইহার স্নানশালার ফোয়ারার মুখ হইতে গোলাপগন্ধী জলধারা উৎক্ষিপ্ত হইতে থাকিত এবং সেই শীকর-শীতল নিভৃত গৃহের মধ্যে মর্ম্মরখচিত স্নিগ্ধ শিলাসনে বসিয়া কোমল নগ্ন পদপল্লব জলাশয়ের নির্ম্মল জলরাশির মধ্যে প্রসারিত করিয়া তরুণী পারসিক রমণীগণ স্নানের পূর্ব্বে কেশ মুক্ত করিয়া দিয়া সেতার কোলে দ্রাক্ষাবনের গজ্‌ল্‌ গান করিত।

 এখন আর সে ফোয়ারা খেলে না, সে গান নাই শাদা পাথরের উপর শুভ্র চরণের সুন্দর আঘাত পড়ে না—এখন ইহা আমাদের মত নির্জ্জনবাসপীড়িত সঙ্গিনীহীন মাশুল-