পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭২
গল্প-দশক।

পাচকটিকে ডাকিয়া প্রচুর ঘৃতপক মাস্‌লা-সুগন্ধি রীতিমত মোগ্‌লাইখানা হুকুম করিলাম।

 পরদিন প্রাতঃকালে সমস্ত ব্যাপারটি পরম হাস্যজনক বলিয়া বোধ হইল। আনমনে, সাহেবের মত সোলাটুপি পরিয়া নিজের হাতে গাড়ি হাঁকাইয়া গড়্‌ গড়্‌ শব্দে আপন তদন্তকার্য্যে চলিয়া গেলাম। সে দিন ত্রৈমাসিক রিপোর্ট্‌ লিখিবার দিন থাকাতে বিলম্বে বাড়ি ফিরিবার কথা। কিন্তু সন্ধ্যা হইতে না হইতেই আমাকে বাড়ির দিকে টানিতে লাগিল। কে টানিতে লাগিল বলিতে পারি না; কিন্তু মনে হইল আর বিলম্ব করা উচিত হয় না। মনে হইল সকলে বসিয়া আছে। রিপোর্ট অসমাপ্ত রাখিয়া সোলার টুপি মাথায় দিয়া সেই সন্ধ্যাধুসর তরুচ্ছায়াঘন নির্জ্জন পথ রথচক্রশব্দে সচকিত করিয়া সেই অন্ধকার শৈলান্তবর্ত্তী নিস্তব্ধ প্রকাণ্ড প্রাসাদে গিয়া উত্তীর্ণ হইলাম।

 সিঁড়ির উপরে সম্মুখের ঘরটি অতি বৃহৎ। তিন সারি বড় বড় থামের উপর কারুকার্যখচিত খিলানে বিস্তীর্ণ ছাদ ধরিয়া রাখিয়াছে। এই প্রকাণ্ড ঘরটি আপনার বিপুল শূন্যতা ভরে অহর্নিশি গম্‌গম্‌ করিতে থাকে। সে দিন সন্ধ্যার প্রাক্কালে তখনো প্রদীপ জ্বালানো হয় নাই। দরজা ঠেলিয়া আমি সেই বৃহৎ ঘরে যেমন প্রবেশ করিলাম অমনি মনে হইল ঘরের মধ্যে যেন ভারি একটা বিপ্লব বাধিয়া গেল—যেন হঠাৎ সভা ভঙ্গ করিয়া চারিদিকের দরজা জান্‌লা ঘর পথ বারান্দা দিয়া কে