পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮৬
গল্প-দশক।

 পাগল চীৎকার করিয়া উঠিল, “তফাৎ যাও, তফাৎ যাও। সব ঝুঁট্‌ হ্যায়, সব ঝুঁট্‌ হ্যায়!”

 দেখিলাম ভোর হইয়াছে এবং মেহেরআলি এই ঘোর দুর্যোগের দিনেও যথানিয়মে প্রাসাদ প্রদক্ষিণ করিয়া তাহার অভ্যস্ত চীৎকার করিতেছে। হঠাৎ আমার মনে হইল, হয় ত ঐ মেহেরআলিও আমার মত এক সময় এই প্রাসাদে বাস করিয়াছিল, এখন পাগল হইয়া বাহির হইয়াও এই পাষাণ রাক্ষসের মোহে আকৃষ্ট হইয়া প্রত্যহ প্রত্যুষে প্রদক্ষিণ করিতে আসে।

 আমি তৎক্ষণাৎ সেই বৃষ্টিতে পাগ্‌লার নিকট ছুটিয়া গিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “মেহেরআলি,ক্যা ঝুঁট্‌ হ্যায়রে?”

 সে আমার কথায় কোন উত্তর না করিয়া আমাকে ঠেলিয়া ফেলিয়া অজগরের কবলের চতুর্দ্দিকে ঘূর্ণ্যমান মোহবিষ্ট পক্ষীর ন্যায় চীৎকার করিতে করিতে বাড়ির চারিদিকে ঘুরিতে লাগিল। কেবল প্রাণপণে নিজেকে সতর্ক করিবার জন্য বারম্বার বলিতে লাগিল—“তফাৎ যাও, তফাৎ যাও, সব ঝুঁট্‌ হ্যায়, সব ঝুঁট্‌ হ্যায়!”

 আমি সেই জলঝড়ের মধ্যে পাগলের মত আপিসে গিয়া করীম্‌খাঁকে ডাকিয়া বলিলাম, ইহার অর্থ কি আমায় খুলিয়া বল।

 বৃদ্ধ যাহা কহিল তাহার মর্ম্মার্থ এই, এক সময় ঐ প্রাসাদে অনেক অতৃপ্ত বাসনা, অনেক উন্মত্ত সম্ভোগের শিখা আলো-