পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অতিথি।
১৯৫

নর্তকী এবং নানাবিধ দোকান নৌকাযোগে ছোট ছোট নদী উপনদী দিয়া এক মেলা অন্তে অন্য মেলায় ঘুরিয়া বেড়ায়। গত বৎসর হইতে কলিকাতার এক ক্ষুদ্র জিম্ন্যাষ্টিকের দল এই পর্য্যটনশীল মেলার আমোদচক্রের মধ্যে যোগ দিয়াছিল। তারাপদ প্রথমতঃ নৌকারোহী দোকানীদের সহিত মিশিয়া মেলায় পানের খিলি বিক্রয়ের ভার লইয়াছিল। পরে তাহার স্বাভাবিক কৌতূহলবশতঃ এই জিম্ন্যাষ্টিকের ছেলেদের আশ্চর্য্য ব্যায়ামনৈপুণ্যে আকৃষ্ট হইয়া এই দলে প্রবেশ করিয়াছিল। তারাপদ নিজে নিজে অভ্যাস করিয়া ভাল বাঁশী বাজাইতে শিখিয়াছিল—জিম্ন্যাষ্টিকের সময় তাহাকে দ্রুততালে লক্ষ্ণৌ ঠুংরির সুরে বাঁশী বাজাইতে হইত এই তাহার একমাত্র কাজ ছিল।

 এই দল হইতেই তাহার শেষ পলায়ন। সে শুনিয়াছিল, নন্দীগ্রামের জমীদার বাবুরা মহা সমারোহে এক সখের যাত্রা খুলিতেছেন—শুনিয়া সে তাহার ক্ষুদ্র বোঁচকাটি লইয়া নন্দীগ্রামে যাত্রার আয়োজন করিতেছিল, এমন সময় মতিবাবুর সহিত তাহার সাক্ষাৎ হয়।

 তারাপদ পর্য্যায়ক্রমে নানা দলের মধ্যে ভিড়িয়াও আপন স্বাভাবিক কল্পনাপ্রবণ প্রকৃতি প্রভাবে কোন দলের বিশেষত্ব প্রাপ্ত হয় নাই। অন্তরের মধ্যে সে সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত এবং মুক্ত ছিল। সংসারের অনেক কুৎসিত কথা সে সর্ব্বদা শুনিয়াছে এবং অনেক কদর্য্য দৃশ্য তাহার দৃষ্টিগোচর হইয়াছে, কিন্তু