পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিজয়া।

পূজা হইয়া থাকে, গ্রামের জমিদার-বংশ ব্যতীত আর কাহারও দুর্গাপূজা করিবার মত অবস্থা নহে। সেই জন্যই গ্রামশুদ্ধ লোক চৌধুরী বাড়ীর পূজায় মাতিয়া যায়। পূজার কয়দিন দিনের বেলায় চৌধুরী বাড়ী ছাড়া অন্য কোন অংশে প্রায় লোক দেখা যায় না।

 কয়দিন বৃষ্টি না হওয়ায় বড়ই গরম পড়িয়াছে, বৃদ্ধ জয়চাঁদ আমগাছের ছায়ায় বসিয়া একখানা বেড়জাল বুনিতেছে, বিজয়া ঘরের দাওয়ায় আঁচল পাতিয়া শুইয়া আছে। তৃতীয় প্রহরে রৌদ্রের তেজ বাড়িয়া উঠিতেছে, বুড়া জাল বুনিতেছে, আর মধ্যে মধ্যে আকাশের দিকে চাহিয়া দেখিতেছে। মাঝে মাঝে নীল আকাশে ছোট ছোট সাদা মেঘ দেখা যাইতেছে, কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই তাহারা ভাসিয়া চলিয়া যাইতেছে। দূরে গ্রাম হইতে নহবতের শব্দ আসিতেছে, সময়ে সময়ে পূজা-বাড়ীর ঢাকঢোলের বাজনার শব্দ শোনা যাইতেছে। এমন সময়ে বাহিরে কে ডাকিল—“জয়চাঁদ বাড়ী আছ?” বুড়া ব্যস্ত হইয়া সূতা ফেলিয়া উঠিল, বাহিরে আসিয়া দেখিল একটি সুন্দর গৌরবর্ণ যুবক দাঁড়াইয়া আছে। বুড়া দেখিয়া ভূমিষ্ট হইয়া প্রণাম করিল। যুবকের বয়স আন্দাজ সতর আঠার, বেশভূষা পল্লীগ্রামবাসীর ন্যায় নহে; দেখিলে কলিকাতার লোক বলিয়া বোধ হয়। কিন্তু যুবক সেই গ্রামের অধিবাসী, জমিদার বদনচন্দ্র চৌধুরীর একমাত্র পুত্র। তিনি কলিকাতায় থাকিয়া পড়াশুনা করেন, সেইজন্য হাবভাব কলিকাতা-বাসীর ন্যায় হইয়া গিয়াছে। বুড়া প্রণাম করিয়া হাত যোড় করিয়া—বলিল “হুকুম!” যুবক হাসিয়া বলিল,— “জয়চাঁদ, বিজয়ার দিন একখানা বাচের নৌকা চাই; কলিকাতা হইতে আমার কয়েকজন বন্ধু আসিয়াছেন, তাঁহাদের বাচ-খেলা দেখাইতে

৯৯