বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরিবর্ত্তন।

ভিতরে পুড়িতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে নূতন বধূ বিবাহিত জীবনের বিশ বৎসর কাটাইয়া দিল, কিন্তু বন্দীপুর গ্রামে তখনও তাহার “নুতন বৌ” নাম ঘুচিল না। হরবল্লভের দ্বিতীয় পত্নীর গর্ভে দুই তিনটী, সন্তান জন্মিয়াছিল, কিন্তু তাহার মধ্যে একটী কন্যা মাত্র জীবিতা ছিল, পিতা আদর করিয়া তাহার নাম রাখিয়াছিলেন ‘শেফালিকা’। অনুমান পঞ্চাশ বৎসর বয়সে হরবল্লভের মৃত্যু হইয়াছিল, তখন তাঁহার পুত্রচতুষ্টর ও কন্যার বিবাহ হইয়া গিয়াছে। তাঁহার মৃতুর পর তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র হেমচন্দ্র সংসারের ভার লইয়ছিলেন। তিনি ধীর, তীক্ষবুদ্ধি ও শান্তস্বভাব ছিলেন, কিন্তু তাঁহার একটি বিশেষ দোষ ছিল। কলিকাতায় থাকিয়া পাঠাভ্যাস কালে তিনি সুরাপান করিতে শিখিয়াছিলেন। দেশে ফিরিয়া পিতার সহস্র তিরস্কার ও লাঞ্ছনা সত্ত্বেও তিনি এ অভ্যাস পরিত্যাগ করিতে পারেন নাই। সামান্য মাত্র সুরা উদরস্থ হইলে তাঁহার আর জ্ঞান থাকিত না। পিতার মৃত্যুর পরে ছয় মাস কাল হেমচন্দ্র জমিদারীর কার্য্য পর্য্যবেক্ষণ করিয়াছিলেন। এক দিন সন্ধ্যার সময় অত্যধিক সুরাপান হেতু অকস্মাৎ তাঁহার মৃত্যু হয়। একবৎসরের মধ্যে দুইটী শোক পাইয়া হরবল্লভের পত্নী শয্যা গ্রহণ করিলেন। তখন হেমচন্দ্রের পত্নী নয়নমঞ্জরীর বয়ঃক্রম দ্বাবিংশতি বৎসরের কিঞ্চিৎ অধিক হইবে। হরবল্লভের দ্বিতীয় পুত্র পরেশচন্দ্র জন্মাবধি সংসারের প্রতি উদাসীন, তিনি বাল্যকালাবধি সঙ্গীত চর্চ্চায় মনোনিবেশ করিয়াছিলেন, সংসারের বা বিষয়সম্পত্তির ধার ধারিতেন না। তাঁহার ন্যায় সুন্দর, সুপুরুষ, সুকণ্ঠ গায়ক দেশে অত্যন্ত বিরল ছিল। তাঁহার পত্নী নিঃসন্তান বলিয়া মনের দুঃখে কাহারও সহিত মিশিতেন না। তৃতীয় পুত্র নরেশচন্দ্র হর-

৭১