পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮

জেলায় আবিষ্কৃত, অপর খানির প্রাপ্তিস্থান ঢাকা জেলার প্রাচীন রামপাল নগর। শিলালিপিতে শ্রীচন্দ্রদেবের পূর্ব্বপুরুষদিগের নাম এইরূপ পাওয়া যায়—

পূর্ণচন্দ্র
সুবর্ণচন্দ্র
ত্রৈলোক্যচন্দ্র

মহারাষ্ট্রীয় মতে গোপীচন্দ্রের পিতার নাম ত্রৈলোক্যচন্দ্র পূর্ব্বেই উক্ত হইয়াছে। দুর্ল্লভ মল্লিকের গানে মাণিকচন্দ্রের পিতা ও পিতামহের নাম সুবর্ণচন্দ্র ও ধাড়িচন্দ্র। দুইটী নামের মিল দেখিয়াই গোপীচন্দ্র বা গোবিন্দচন্দ্রের সহিত তাম্রফলকে উক্ত ব্যক্তিগণের সম্বন্ধ স্থির করিয়া ফেলা প্রকৃত ঐতিহাসিকের কার্য্য নহে। কিন্তু এই সকল তাম্রফলকের প্রমাণে ইহা স্পষ্টই দেখিতে পাওয়া যায় যে, যে সময়ে রাজেন্দ্রচোল তিরুমলয়ে বঙ্গাধিপ গোবিন্দচন্দ্রকে পরাজয় করার গর্ব্ব অনুভব করিতেছিলেন তাহারই নিকটবর্ত্তী সময়ে বঙ্গদেশে চন্দ্রউপাধিধারী আরও রাজার অভাব ছিল না। ইহাতে গিরিলিপির গোবিন্দচন্দ্র যে তারলিপির শ্রীচন্দ্রের জ্ঞাতি, এই অনুমানই স্বাভাবিক। পরম্পরাগত প্রবাদ দীর্ঘকাল পরে অনেক সময়েই সম্বন্ধ বিপর্য্যয় ঘটাইয়া দেয়, কিন্তু বঙ্গের ভিতরের ও বাহিরের গাথার কোন কোন নাম যে তাম্রপট্টের কোন কোন নামের সহিত ঠিক মিলিয়া যাইতেছে, ইহাও গোপীচন্দ্রের এই বংশ-সম্ভূত হওয়ার অনুকূল প্রমাণ বলিয়াই মনে হয়। বঙ্গদেশে আবিষ্কৃত তাম্রলিপিতে গোপচন্দ্র নামে আর একটী রাজার পরিচয় পাওয়া যায়।<ref>Indian Ant: 1910</ref কিন্তু তাঁহার সময় খৃঃ ষষ্ঠ শতাব্দী বলিয়া অনুমান করা হইয়া থাকে। ডাঃ হর্ণলি এই গোপচন্দ্র ও আমাদের গোপীচন্দ্র অভিন্ন অনুমান করেন; কিন্তু বিভিন্ন দেশীয় প্রবাদ গোপীচন্দ্রের সময় যতই তিমিরাচ্ছন্ন করিয়া রাখুক, তিনি যে এত প্রাচীন কালের লোক এরূপ মনে করা কঠিন। অষ্টম শতাব্দী হইতে দশম শতাব্দী পর্য্যন্ত বঙ্গদেশের ইতিহাস গাঢ় কুহেলিকায় আচ্ছন্ন। ত্রিপুরা জেলার উত্তরাংশে আবিষ্কৃত দেবমূর্ত্তির পাদলিপি হইতে জানা যায়, দশম শতাব্দীর শেষভাগে মহীপাল দেবের রাজত্ব সমতট পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইয়াছিল।<ref>Vole J.A.S B 1915. ঢাকা রিভিউ ও সম্মিলন ১৩১১।</ref তৎপূর্ব্বে শূরবংশ বা পালবংশের