পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলে কল্পনা করেন আমার বাবা তার চেয়ে অনেক বেশি বড়ো। এইবার আপনার যা-কিছু উপদেশ আমাকে দেবার আছে আপনি দিয়ে যান।

 হারানবাবুর মুখ কালো হইয়া উঠিল। তিনি চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিলেন, “সুচরিতা!"

 সুচরিতা বইয়ের পাতা হইতে মুখ তুলিল। হারানবাবু কহিলেন, “তোমার সামনে ললিতা আমাকে অপমান করবে!"

 সুচরিতা ধীরস্বরে কহিল, “আপনাকে অপমান করা ওর উদ্দেশ্য নয়— ললিতা বলতে চায় বাবাকে আপনি সম্মান করে চলবেন। তার মতো সম্মানের যোগ্য আমরা তো কাউকেই জানি নে।”

 একবার মনে হইল হারানবাবু এখনই চলিয়া যাইবেন, কিন্তু তিনি উঠিলেন না। মুখ অত্যন্ত গম্ভীর করিয়া বসিয়া রহিলেন। এ বাড়িতে ক্রমে ক্রমে তাঁহার সম্ভ্রম নষ্ট হইতেছে ইহা তিনি যতই অনুভব করিতেছেন ততই তিনি এখানে আপন আসন দখল করিয়া বসিবার জন্য আরো বেশি পরিমাণে সচেষ্ট হইয়া উঠিতেছেন। ভুলিতেছেন যে, যে আশ্রয় জীর্ণ তাহাকে যতই জোরের সঙ্গে আঁকড়িয়া ধরা যায় তাহা ততই ভাঙিতে থাকে।

 হারানবাবু রুষ্ট গাম্ভীর্যের সহিত চুপ করিয়া রহিলেন দেখিয়া ললিতা উঠিয়া গিয়া সুচরিতার পাশে বসিল এবং তাহার সহিত মৃদুস্বরে এমন করিয়া কথাবার্তা আরম্ভ করিয়া দিল যেন বিশেষ কিছুই ঘটে নাই।

 ইতিমধ্যে সতীশ ঘরে ঢুকিয়া সুচরিতার হাত ধরিয়া টানিয়া কহিল, “বড়দিদি, এসো।”

 সুচরিতা কহিল, “কোথায় যেতে হবে?”

 সতীশ কহিল, “এসো-না, তোমাকে একটা জিনিস দেখাব। ললিতাদিদি, তুমি বলে দাও নি!"

 ললিতা কহিল, “না।”

 তাহার মাসির কথা ললিতা সুচরিতার কাছে ফাঁস করিয়া দিবে না

২৬৯