পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সুচরিতা কহিল, “তাঁদের সঙ্গে যে পরিচয় নেই।”

 ললিতা কহিল, “বাঃ, গৌরবাবুর বাপ যে বাবার ছেলেবেলাকার বন্ধু ছিলেন।”

 সুচরিতার মনে পড়িয়া গেল, কহিল, “হাঁ, তা বটে।”

 সুচরিতাও অত্যন্ত উৎসাহিত হইয়া উঠিল। কহিল, “ললিতাভাই, তুমি যাও, বাবার কাছে বলো গে।”

 ললিতা কহিল, “না, আমি বলতে পারব না, তুমি বলো গে।”

 শেষকালে সুচরিতাই পরেশবাবুর কাছে গিয়া কথাটা পাড়িতেই তিনি বলিলেন, “ঠিক বটে, এতদিন আমাদের যাওয়া উচিত ছিল।”

 আহারের পর যাওয়ার কথাটা যখনই স্থির হইয়া গেল তখনই ললিতার মন বাঁকিয়া উঠিল। তখন আবার কোথা হইতে অভিমান এবং সংশয় আসিয়া তাহাকে উল্‌টা দিকে টানিতে লাগিল। সুচরিতাকে গিয়া সে কহিল, “দিদি, তুমি বাবার সঙ্গে যাও। আমি যাব না।”

 সুচরিতা কহিল, “সে কি হয়! তুই না গেলে আমি একলা যেতে পারব না। লক্ষ্ণী আমার, ভাই আমার—চল্‌ ভাই, গোল করিস নে।”

 অনেক অনুনয়ে ললিতা গেল। কিন্তু বিনয়ের কাছে সে যে পরাস্ত হইয়াছে—বিনয় অনায়াসেই তাহাদের বাড়ি না আসিয়া পারিল, আর সে আজ বিনয়কে দেখিতে ছুটিয়াছে—এই পরাভবের অপমানে তাহার বিষম একটা রাগ হইতে লাগিল। বিনয়কে এখানে দেখিতে পাইবার আশাতেই আনন্দময়ীর বাড়ি আসিবার জন্য যে তাহার এতটা আগ্রহ জন্মিয়াছিল, এই কথাটা সে মনে মনে একেবারে অস্বীকার করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল এবং নিজের সেই জিদ বজায় রাখিবার জন্য না বিনয়ের দিকে তাকাইল, না তাহার নমস্কার ফিরাইয়া দিল, না তাহার সঙ্গে একটা কথা কহিল। বিনয়ে মনে করিল, ললিতার কাছে তাহার মনের গোপন কথাটা ধরা পড়িয়াছে বলিয়াই সে অবজ্ঞার দ্বারা তাহাকে এমন করিয়া প্রত্যাখ্যান করিতেছে। ললিতা যে তাহাকে ভালোবাসিতেও পারে, এ কথা অনুমান

২৮৪