পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিয়া পাঠাইয়াছ ইহাই আমার কাছে আশ্চর্য বোধ হইতেছে। ব্রাহ্মসমাজের লোক তোমাকে যে খবর দিয়াছে তাহার সত্যও কি যাচাই করিতে হইবে! এত অবিশ্বাস! তাহার পরে, কোনো হিন্দু যুবকের সঙ্গে আমার বিবাহের সম্ভাবনা ঘটিয়াছে সংবাদ পাইয়া তোমার মাথায় বজ্রাঘাত হইয়াছে, কিন্তু আমি তোমাকে নিশ্চয় বলিতে পারি ব্রাহ্মসমাজে এমন সুবিখ্যাত সাধু যুবক আছেন যাঁহার সঙ্গে বিবাহের আশঙ্কা বজ্রাঘাতের তুল্য নিদারুণ এবং আমি এমন দুই-একটি হিন্দু যুবককে জানি যাঁহাদের সঙ্গে বিবাহ যে কোনো ব্রাহ্মকুমারীর পক্ষে গৌরবের বিষয়। ইহার বেশি আর একটি কথাও আমি তোমাকে বলিতে ইচ্ছা করি না।'

 এ দিকে সেদিনকার মতো পরেশবাবুর কাজ বন্ধ হইয়া গেল। তিনি চুপ করিয়া বসিয়া অনেকক্ষণ চিন্তা করিলেন। তাহার পরে ভাবিতে ভাবিতে ধীরে ধীরে সুচরিতার ঘরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। পরেশের চিন্তিত মুখ দেখিয়া সুচরিতার হৃদয় ব্যথিত হইয়া উঠিল। কী লইয়া তাঁহার চিন্তা তাহাও সে জানে এবং এই চিন্তা লইয়াই সুচরিতা কয়দিন উদ্‌বিগ্ন হইয়া রহিয়াছে।

 পরেশবাবু সুচরিতাকে লইয়া নিভৃত ঘরে বসিলেন এবং কহিলেন, “মা, ললিতা সম্বন্ধে ভাবনার সময় উপস্থিত হয়েছে।”

 সুচরিতা পরেশবাবুর মুখে তাহার করুণাপূর্ণ দৃষ্টি রাখিয়া কহিল, “জানি বাবা!"

 পরেশবাবু কহিলেন, “আমি সামাজিক নিন্দার কথা ভাবছি নে। আমি ভাবছি— আচ্ছা ললিতা কি—"

 পরেশের সংকোচ দেখিয়া সুচরিতা আপনিই কথাটাকে স্পষ্ট করিয়া লইতে চেষ্টা করিল। সে কহিল, “ললিতা বরাবর তার মনের কথা আমার কাছে খুলে বলে। কিন্তু কিছুদিন থেকে সে আমার কাছে আর তেমন করে ধরা দেয় না। আমি বেশ বুঝতে পারছি—"

 পরেশ মাঝখান হইতে কহিলেন, “ললিতার মনে এমন কোনো ভাবের উদয় হয়েছে যেটা সে নিজের কাছেও স্বীকার করতে চাচ্ছে না। আমি

২৪
৩৬৯